নয়া দিল্লি: তালিবানি দখলে চলে গিয়েছে আফগানিস্তান। আপাতত চলছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া, যে কোনও দিনই নতুন সরকারের ঘোষণা করতে পারে তালিবানরা। তবে তালিবানি সরকার গঠন হলে ভারতে, বিশেষত জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে পারে বলেই জানাল ভারতীয় সেনার গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার বিকেলে তারা প্রতিরক্ষামন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্ট জমা দেন। সেখানেই এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
রবিবার কাবুল দখল হয়ে যাওয়ার পরই উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়া দিল্লি। সোমবারই সেনার নর্দান কম্যান্ডের তরফে জানানো হয়েছিল ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করার কথা। সেই নির্দেশ মেনেই মঙ্গলবার ভোর থেকে অতি স্পর্শকাতর সীমান্ত এবং সংলগ্ন অংশগুলিতে নজরদারিতে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয়। সেনা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার ফের নর্দান কম্যান্ড বৈঠকে বসে। সীমান্ত পরিস্থিতি এবং নজরদারিতে কোথাও ফাঁকফোকর রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
এ দিকে, মঙ্গলবারই সেনার গোয়েন্দাবাহিনীর রিপোর্টেও জানানো হয়, জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে জঙ্গি কার্যকলাপ বাড়তে পারে আগামিদিনে। একইসঙ্গে বাড়তে পারে অনুপ্রবেশের সংখ্যাও। সূত্রের খবর, সীমান্তের ও পারে লঞ্চ প্য়াডগুলিতে ইতিমধ্যেই জঙ্গি উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ও আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারকার্যের দিকেই সম্পূর্ণ নজর থাকায়, সেই সুযোগকেই কাজে লাগাতে চাইছে তারা।
মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের কাছে জমা দেওয়া রিপোর্টে জানানো হয়েছে, জঙ্গিদের এই পরিকল্পনার কথা। সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়াতে ও পরিস্থিতির দিকে কঠোর নজরদারি চালানোর কথাও বলা হয়েছে গোয়েন্দা রিপোর্টে।
সেনা সূত্রেও জানা গিয়েছে, তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের টালমাটাল পরিস্থিতির জেরেই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার পরিস্থিতিও খারাপ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কোনও সময়ে সংঘর্ষ বা অনপ্রবেশ শুরু হতে পারে।
এ দিকে, গতকালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরুরি বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে উপস্তিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও। সূত্রের খবর, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত দেশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানিয়েছেন। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত কাবুল থেকে ভারতগামী বিমানের যাবতীয় আপডেট নেন। ভারতের যে সমস্ত নাগরিক এখনও আফগানিস্তানে আটকে রয়েছেন,তাঁদের কী ভাবে সুরক্ষিত ভাবে ফেরানো যায়, তা নিয়েও বৈঠকে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়।
এ দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীও জানিয়েছেন, তালিবানরা যদি দেশে কোনও রকম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু করার চেষ্টা করে, তবে তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না, দেওয়া হবে কড়া জবাব। তিনি বলেন, “কেবল ভারতই নয়, তালিবানরা অন্যান্য দেশের জন্যও সমস্যা তৈরির চেষ্টা করবে। আমরা গত সাত বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছি। সীমান্তে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে ভারত এখন সক্ষম ও স্বনির্ভর। একইসঙ্গে শক্তিশালীও বটে।” আরও পড়ুন: নজরে আফগানিস্তান, মোদীর বাসভবনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অমিত শাহ-রাজনাথ-অজিত দোভাল