তিরুবনন্তপুরম: ‘দ্য কেরল স্টোরি’ মুক্তিতে আর কোনও বাধা রইল না। আজ, শুক্রবার (৫ মে), ফিল্মটি মুক্তি পাওয়ার কথা। এদিনই এই বিতর্কিত ফিল্মটির মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করল কেরল হাইকোর্ট। বিচারপতি এন নাগারেশ এবং বিচারপতি সোফি থমাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ফিল্মটি সত্যি ঘটনা থেকে ‘অনুপ্রাণিত’ বলে দাবি করা হয়েছে। একেবারে সত্যি ঘটনা বলে দাবি করেননি নির্মাতারা। তাছাড়া, সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন জনগণের দেখার জন্য সার্টিফিকেট দিয়েছে ফিল্মটিকে। তবে, ফিল্মটির ট্রেলারটি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ট্রেলারে দাবি করা হয়েছিল যে, কেরলের ৩২,০০০ মহিলাকে জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এ নিয়োগ করা হয়েছে। ট্রেলারটি সরিয়ে দিতে বললেও আদালত জানিয়েছে যে, ট্রেলারটিতে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক কিছু নেই। ‘দ্য কেরল স্টোরি’ মামলার শুনানিতে কী কী বিষয় উঠে এল দেখে নিন এক নজরে –
– আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী দুষ্যন্ত দেব জানান, বর্তমান সময়ের নিরিখে, সমাজে এই ফিল্মটির প্রভাব অনেক বেশি পড়তে পারে। এর ফলে গুরুতর আইন শৃঙ্খলাগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। আদালত জানায় ফইল্মটি কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা ভিত্তিক নয়, এটি একটি কাহিনি মাত্র। দুষ্যন্ত দেব সেই কাহিনির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, এক বিশেষ সম্প্রদায়কে এখানে খলনায়ক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
– আরেক আইনজীবী কালেশ্বরম রাজ জানান, এই ফিল্মটির প্রেক্ষিতে আদালত বিচার করে দেখতে পারে যে, শিল্পের আকারেও হেট স্পিচ বা ঘৃণামূলক ভাষণ দেওয়া হচ্ছে কিনা।
– ফিল্মটির প্রযোজকদের পক্ষের আইনজীবী রবি কদম জানান, ফিল্মটি একটি কল্পকাহিনি বলে স্পষ্ট জানানো হয়েছে। এটি শুধুমাত্র সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। ফিল্মে সবকিছুই নাটকীয়ভাবে দেখানো হয়, নাহলে কেউ ফিল্ম দেখবে না।
– বিচারপতি নাগারেশ ফিল্মটির ট্রেলারে যে ৩২০০০ মহিলাকে আইএসআইএস-এ নিযুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। আইনজীবী রবি কদম জানান, ফিল্মটির নির্মাতারা ওই তথ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু, কোথা থেকে এই তথ্য তারা পেয়েছিলেন, তার কোনও উৎস জানাতে পারেননি। তবে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ওই ট্রেলারটি সরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে নির্মাতা পক্ষ।
– দুই পক্ষের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি শুনে বিচারপতি নাগারেশ বলেন, “বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা বলে একটা জিনিস আছে। শৈল্পিক স্বাধীনতা রয়েছে, আমাদের তার ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে। এই ফিল্মে কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা হয়নি, শুধুমাত্র দায়ী করা হয়েছে আইএসআইএসকে।”
– আবেদনকারীদের অনুরোধে এজলাসেই ট্রেলারটি চালিয়ে দেখেন বিচারপতিরা। বিচারপতি নাগারেশ বলেন, “এটা একটা কল্পকাহিনি। ভূত বা ভ্যম্পায়ার বলে কিছু হয় না, তবু, বহু মুভিতেই তা দেখানো হয়। অনেক সিনেমা আছে, যেখানে হিন্দু সন্ন্যাসীদের নেতিবাচক ভূমিকায় দেখানো হয়। তা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠে না। হিন্দি ও মালয়ালমে এমন অনেক ফিল্ম আছে। কেরলে আমরা সকলে অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ।”