সুবীর চক্রবর্তী: প্রণব মুখোপাধ্যায়, আহমেদ প্যাটেলের মতো ক্রাইসিস ম্যানেজারের আজ বড়ই অভাব কংগ্রেসে। এই অভাব কতটা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পঞ্জাব। গুজরাত, কর্নাটকের মতো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে বিজেপিও। যাকে বলে একেবারে নিখুঁত অপারেশন। কিন্তু পঞ্জাবে মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে গিয়ে একেবারে নাকানি-চোবানি খাওয়ার অবস্থা কংগ্রেসের। নভজ্যোত সিং সিধুর ক্ষোভ সামাল দিতে আরও একাধিক ক্ষোভের অঙ্কুর তৈরি হল পঞ্চনদের মাটিতে।
রাহুল, প্রিয়ঙ্কারা দফায় দফায় বৈঠক করলেন ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বাছতে গিয়ে অমরিন্দর সিংয়ের মতো আরও কয়েকজন ক্ষুব্ধ নেতার আর্বিভাব হল। সুনীল জাখর, সুখজিন্দর রনধওয়াররা হয়তো প্রবল প্রতাপশালী নন, কিন্তু নতুন বিদ্রোহের বীজ তো পোঁতা হয়ে গেল। এরকম যে হতে পারে তা আগেভাগে বুঝতে পেরেছিলেন সনিয়া। আর সেই কারণেই অম্বিকা সোনির কাছে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। অম্বিকা গররাজি হওয়ায় সমস্যার দরজা আরও হাট করে খুলে যায়।
পঞ্জাবে দলের বিবাদ রাতারাতি শুরু হয়নি। সিধু-অমরিন্দরের বিবাদ একটু একটু করে চড়ছিল। সমস্যা মেটাতে ডাক পড়ে হরিশ রাওয়াতের। সমস্যা মেটানো দূরের কথা. নিজে আলটপকা মন্তব্য করে হরিশ বিষয়টি আরও জটিল করে তোলেন।
সিধুর দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে গিয়ে ঝানু রাজনীতিক অমরিন্দর সিংকে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে ক্ষমতা থেকে সরতে হল। গেরুয়া ঝড়ের মুখে রুখে দাঁড়ানো স্তম্ভকে সরতে হল মাথা নিচু করে। দলের সিংহভাগ বিধায়কের সমর্থন হারানো প্রবীণ নেতার প্রস্থানের রাস্তাটুকু কিন্তু মসৃন করা যেত। সেজন্য দরকার ছিল একজন দক্ষ ক্রাইসিস ম্যানেজারের। কর্নাটকে দাপুটে ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু তাঁকে দিয়েই নতুন নেতা বাছাইয়ের অভিনয়টুকু করিয়ে নিয়েছেন অমিত শাহরা।
রাহুল, প্রিয়ঙ্কারা তা পারেননি। এই কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে পারার মতো নেতার এখন বড্ড অভাব কংগ্রেসে। এই অভাব আছে বলেই ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানেও কংগ্রেসের ঘরোয়া বিপদ বাড়ছে। বিশাল দেশে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা কংগ্রেসের প্রদীপ এখানেও ঝোড়ো হাওয়ার মুখে। ছত্তীসগঢ়ে ভূপেশ বাঘেল, রাজস্থানে অশোক গেহলটের কুর্সি টালমাটাল। বিজেপির রাজনৈতিক চালে নয়, দলের কোন্দলেই দুই রাজ্যে বিপদ বাড়ছে কংগ্রেসের।
রাজস্থানে সচিন পাইলটের দাবি, মন্ত্রিসভায় তাঁর অনুগামীদের জায়গা দিতে হবে। রাহুলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন তিনি। পঞ্জাবের পরিবর্তন দেখে ছত্তীসগঢের টি এস সিং দেও দিল্লিতে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস সিং দেও মনে করাচ্ছেন রাহুল গান্ধীর রফাসূত্রের কথা। ওই রফাসূত্র অনুযায়ী নাকি প্রথম আড়াই বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার কথা ভূপেশ বাঘেলের। পরের ধাপে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সির দাবিদার টি এস সিং দেও। ভূপেশের মুখ্য়মন্ত্রিত্বের আড়াই বছরের মেয়াদ ফুরিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী বদলের সুর চড়ছে রায়পুরে। রাজস্থান, ছত্তীসগঢের ক্ষোভ, বিক্ষোভ সামাল দিতে এখনও কোনও নজরের পড়ার মতো ব্যবস্থা নেয়নি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ক্ষোভ, বিক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে না জ্বললে কংগ্রেস নেতাদের বোধহয় কোনও কিছুই আর চোখে পড়ে না । নাকি সামলানোর উপায় নেই বলেই মৌনতা?
দলের হেভিওয়েট নেতাদের এক বড় অংশ এখন বিদ্রোহী। কপিল সিব্বল, আনন্দ শর্মা, গুলাম নবি আজাদদের ক্ষোভের কারণ শীর্ষ নেতারা জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি সামলাবে কে? আহমেদ প্যাটেলদের মতো ম্যানেজার কই? প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো রাজনীতির মাঠের দূরের ছবি দেখার মতো লেন্সও নেই । সনিয়া ছাড়া দলের সব স্তরে গ্রহণযোগ্য মুখও নেই। কংগ্রেস এখন বড় সংকটে।
আরও পড়ুন: TMC in Tirpura: ক্ষমতা প্রয়োগ করছে বিপ্লব দেব সরকার? ব্যাখ্যা চাইতে আদালতে যাচ্ছে তৃণমূল