Top-secret US cables: মার্কিন গোপন তারে মোদী-রাহুলকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী! দুই দশক আগেই বলেছিল…

Jul 08, 2024 | 2:46 PM

Top-secret US cables: ২০০৬ এবং ২০০৭-এর মধ্যে ভারত থেকে বেশ কিছু গোপন তার পাঠিয়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। ২০১০ সালে এই গোপন তারগুলি ফাঁস করেছিল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস। যা, 'কেবলগেট' নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতির গোপন তথ্যাবলী ফাঁস করেছিল উইকিলিকস। আর এই গোপনীয় কূটনৈতিক তথ্যাবলী থেকেই জানা যায়, তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেসের 'যুবরাজ' রাহুল গান্ধী সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা-চিন্তা কী ছিল।

Top-secret US cables: মার্কিন গোপন তারে মোদী-রাহুলকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী! দুই দশক আগেই বলেছিল...
২০০৬-এই মোদী-রাহুল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল আমেরিকা
Image Credit source: Twitter

Follow Us

নয়া দিল্লি: তিনবার তো দূরের কথা, একবারও নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন, দুই দশক আগেও কি কেউ ভাবতে পারত? নাকি কেউ ভাবতে পেরেছিল ২০১৪ এবং ২০১৯-এর ভরাডুবির পর, ২০২৪-এ বিজেপিকে ক্ষণতাচ্যুত করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ফিরে আসবেন রাহুল গান্ধী? হয়তো কেউই ভাবতে পারেননি। তবে, মোদীর উত্থানের আভাস দিয়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। ২০০৬ এবং ২০০৭-এর মধ্যে ভারত থেকে বেশ কিছু গোপন তার পাঠিয়েছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা। ২০১০ সালে এই গোপন তারগুলি ফাঁস করেছিল জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের উইকিলিকস। যা, ‘কেবলগেট’ নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতির গোপন তথ্যাবলী ফাঁস করেছিল উইকিলিকস। আর এই গোপনীয় কূটনৈতিক তথ্যাবলী থেকেই জানা যায়, তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেসের ‘যুবরাজ’ রাহুল গান্ধী সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনা-চিন্তা কী ছিল। দুই দশক আগে, ভারতের এই দুই প্রধান রাজনৈতিক নেতা সম্পর্কে কী ভবিষ্যদ্বাণি করেছিল তারা –

২০০৬ সালের ২ নভেম্বর-এর ফাঁস হওয়া তার

২০০৬ সালের ২ নভেম্বর, রাত ১২টা বেজে ৪২ মিনিটে, মুম্বইয়ের মার্কিন কনস্যুলেট থেকে একটি গোপন কূটনৈতিক তার গিয়েছিল আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় সরকারী অফিসগুলিতে। তারটিতে আলোচনা করা হয়েছিল, ছিল গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উত্থান এবং আগামিদিনে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে। মনে রাখতে হবে, গোটা বিশ্ব তো দূরের কথা, ভারতবাসীও মোদীকে তখনও জাতীয় নেতা হিসেবে কল্পনাই করেনি। মার্কিন কনসাল জেনারেল, মাইকেল এস ওয়েন লিখেছিলেন, মোদী নিজেকে একজন অ-দুর্নীতিবাজ, কার্যকর প্রশাসক হিসেবে সফলভাবে তুলে ধরেছেন। এছাড়া, ব্যবসা করার সুবিধা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা নেওয়া, হিন্দুদের স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন।

তবে, শুধু ভাল-ভাল কথাই নয়, মোদীকে নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগও প্রকাশ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গুজরাট দাঙ্গার ‘নেতিবাচক ব্যাগেজ’ তিনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে ভিন্ন মত রয়েছে বলে জানিয়েছিল মার্কিন তার-বার্তা। মোদীর অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রশংসা করলেও, দাঙ্গায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ ছিল সেই তার-বার্তায়। বলা হয়েছিল, বিজেপি আশা করে, মোদীর অন্যান্য গুণাবলী দেখলে, সাধারণ মানুষ গুজরাট দাঙ্গার কথা আর মনে রাখবে না। একইসঙ্গে বলা হয়েছিল, আহমেদাবাদে যেরকম মোদীর অহংকারী এবং ভোঁতা নেতৃত্বের নীচে চাপা পড়েছে বিজেপি, জাতীয় রাজনীতিতে মোদীর উত্থান ঘটলে নয়া দিল্লিতেও একই ছবি দেখা যাবে বলে উদ্বেগ রয়েছে বিজেপির মধ্যেই।

২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বরের ফাঁস হওয়া তার

গুজরাট দাঙ্গার প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদীকে ভিসা দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর, মোদীর সঙ্গে মার্কিন কনসাল জেনারেলের প্রথম বৈঠক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল ২০০৬ সালের ২৭ নভেম্বর পাঠানো এক তার-বার্তায়। মোদী সরকারের অধীনে গুজরাটে রাস্তার উন্নতি, সকলের জন্য বিদ্যুত সংযোগের ব্যবস্থা, সকলের জন্য জলের ব্যবস্থা, প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্রুত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বহু ক্ষেত্রে গুজরাটের অগ্রগতি স্বীকার করেছিলেন মার্কিন কনসাল জেনারেল। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীকে সাম্প্রদায়িক হিংসা সম্পর্ক জিজ্ঞাসা করতেই দৃশ্যত বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি। ইরাকের আবু ঘ্রাইব কারাগার এবং অন্যত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা তুলে মোদী দাবি করেছিলেন, ভারতের অন্য যে কোনও জায়গার থেকে গুজরাটে ভালো আছেন মুসলমানরা। মার্কিন কনসাল জেনারেল আরও দাবি করেছিলেন, কংগ্রেস নেতারাও মোদীর প্রশংসা করেছিলেন। মোদী কীভাবে বিজেপির জাতীয় স্তরের নেতা হয়ে উঠতে পারেন, সেই বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছিল এই তারে।

২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলের ফাঁস হওয়া তার

এই তার ছিল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে। মোদীর উত্থানের বিষয়ে যতটাই নিশ্চিত ছিলেন মার্কিন কূটনীতিকরা, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে ততটাই অনিশ্চিত ছিলেন তাঁরা। ২০০৭-এর ২৩ এপ্রিলের পাঠানো তারে, মার্কিন রাজনৈতিক উপদেষ্টা, টেড ওসিয়াস বলেছিলেন, উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের বিতর্কিত বিবৃতি দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি লেখেন, ধারাবাহিক রোডশো চলাকালীন, রাহুল গান্ধী পাকিস্তান, বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং উত্তর প্রদেশের রাজনীতি সম্পর্কে গোল-গোল এবং বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে যা যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়নি। একই সঙ্গে বলা হয়, কংগ্রেসের অভ্যন্তরেই অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গুমাবলী নেই রাহুলের।

রাহুল গান্ধীর অন্যান্য ত্রুটি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছিল। বলা হয়, রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতার জন্য তিনি যথেষ্ট প্রস্তুতি নেন না। কিছু কংগ্রেস নেতা যে রাহুলের থেকে তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নেতৃত্বে চান, তাও বলা হয় ওই তার-বার্তায়। আরও বলা হয়, রাহুল গান্ধীর অনেক বিবৃতিই বিতর্কিত এবং খুব একটা অর্থবহ নয়। এই ধরনের বিবৃতির ফলে, রাজনৈতিক নেতারা মনে করেন ঐতিহাসিক বিষয়গুলি নিয়ে রাহুল তার “আবেগের অভাব রয়েছে। রাহুলের হতাশাজনক পারফরম্যান্স উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসকে ডোবাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল।

মোদীতে ঠিক, রাহুলে ভুল

মার্কিন কুটনীতিকদের পাঠানো এই তারবার্তাগুলিতে স্পষ্ট, দুই দশক আগেই জাতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীর উত্থান সম্পর্কে একেবারে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আমেরিকান কূটনীতিকরা। কিন্তু, তারা কার্যত রাহুল গান্ধীকে ধর্তব্যের মধ্যেই ধরেননি। তবে, আজ সেই রাহুল গান্ধীই সংসদে এবং সংসদের বাইরে ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন বিজেপিকে। বিরোধী সকল দলের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজেকে। অর্থাৎ, মোদীর কাহিনি ধরতে তারা কোনও ভুল করেনি, তবে রাহুল গান্ধীর ভবিষ্যৎ দেখতে ভুল করেছে তারা।

 

Next Article