আগরতলা : ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিপ্লব দেব (Biplab Kumar Deb)। ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি রয়েছে। তার আগেই ত্রিপুরার (Tripura) রাজ্যপালে কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিলেন বিপ্লব দেব। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিজেপির তরফ থেকে ভূপেন্দ্র যাদবকে দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়েছে আগরতলায়। তাঁর সঙ্গে পর্যবেক্ষক হিসেবে ত্রিপুরায় গিয়েছেন বিনোদ তাওড়েও। তাঁরা দুইজনেই রাজনৈতিক মহলে মোদী ও অমিত শাহর বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন বিধায়করাই গণতান্ত্রিক উপায়ে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নিন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই পদক্ষেপ যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইস্তফার পর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব জানিয়েছেন, “পার্টি সবার উপরে। আমরা সবাই পার্টির নিষ্ঠাবান কার্যকর্তা। তৎকালীন সভাপতি অমিত শাহ আমাকে প্রদেশ সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। তারপর থেকে কাজ করা শুরু করেছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহর দেখানো পথে। আশা করি আমাকে যে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে – তা দলের রাজ্য সভাপতি হিসেবেই হোক বা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে, রাজ্যের মানুষের সঙ্গে যাতে ন্যায় হয়, তার চেষ্টা করেছি। ত্রিপুরার সামগ্রিক উন্নয়ন ও মানুষ যাতে শান্তিতে থাকতে পারে, তার চেষ্টা করেছি। কমিউনিস্টদের থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ এক নতুন পথে চলতে চেয়েছিল – আমি সেই মতো কাজ করেছি। এখন সামনে নির্বাচন রয়েছে। দল চাইছে দায়িত্ববান কার্যকর্তাদের নিয়ে আসার জন্য। সংগঠন থাকতে তবেই সরকার থাকবে। তাই আগে ২০২৩ সালে দলকে জিতিয়ে আনা দরকার। তারপর তো কেউ না কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন।”
উল্লেখ্য, শুক্রবারই বিপ্লব দেব ছিলেন দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আর তারপর আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিপ্লব দেব। আর ইস্তফার পর তাঁর বার্তা, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য দলের জয় দরকার। আর দলের জয়ের জন্য সংগঠন থাকা দরকার। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, গতকাল অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর যে কথা হয়েছে, সেই কথাটাই তিনি বললেন ইস্তফা দেওয়ার পর। রাজনীতির কারবারিদের মতে, দলের তরফ থেকে বিপ্লব দেবকে বার্তা দেওয়া হতে পারে যে যদি ২০২৩ সালে দলকে জিততে হয়, তাহলে এমন কাউকে আনা দরকার, যাঁর উপর গোটা সংগঠন ভরসা রাখতে পারবে।
ত্রিপুরায় বিজেপিতে বিপ্লব দেবের একটি বিরুদ্ধ গোষ্ঠী রয়েছে বলেও রাজনৈতিক মহলে কানাঘুষো শোনা যায়। সেই গোষ্ঠী বার বার দিল্লির দরবারে গিয়ে নালিশও করেছে অতীতে। কিন্তু তখন সেই অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন যেহেতু আর এক বছর পরেই বিধানসভা নির্বাচন, তাই এই বিষয়টির থেকে একেবারে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারছে না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অন্তত এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে এই একই ধরনের পদক্ষেপ করেছিল। কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ড, এমনকী মোদী-শাহর রাজ্য গুজরাটেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। ভোটের মাত্র ১৫ মাস বাকি থাকতে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বিজয় রূপানী। সেই জায়গায় রাজনীতির আঙিনায় তুলনামূলকভাবে নতুন, প্রথমবারের বিধায়ক ভূপেন্দ্র প্যাটেলকে নিয়ে আসা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। রাজনৈতিক মহলে অনেকেই বলে থাকেন, প্যাটেল ভোটব্যাঙ্কের উপর দখল আরও মজবুত করতেই গুজরাটে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এবার দলের সংগঠনকে মজুবত করতে আবারও সেই একই পদক্ষেপ দেখা গেল ত্রিপুরায়।