আগরতলা: ২০২৩ সালে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। আর তার আগে সর্বশক্তি দিয়ে ঘর গুছিয়ে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিপ্লব দেবের রাজ্যে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার নির্বাচনে মোদী-শাহর অশ্বমেধের ঘোড়া রুখে দিয়ে আত্মপ্রত্যয়ে ভরপুর তৃণমূল এখন আদা জল খেয়ে নেমেছে পড়শি রাজ্য়ে ঘাসফুল ফোটানোর চেষ্টায়। এই উপলক্ষ্যেই শনিবার ত্রিপুরার আগরতলায় তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নেতৃত্বে ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুস্মিতা দেবরা।
প্রথমত, ত্রিপুরা বাংলাভাষী রাজ্য। তাই বঙ্গ জয় করতে এসে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের যে ভাষাগত বাধার সামনে পড়তে হয়েছিল, সেই চিন্তা তৃণমূলের প্রথম থেকেই নেই। এছাড়া মহিলা ভোট যে তৃতীয় বারের জন্য তৃণমূলকে বাংলার ক্ষমতায় নিয়ে আসতে অনুঘটকের কাজ করেছিল, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তাই এবার ত্রিপুরাতেও সেই লক্ষ্যেই এগোতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। আর সেই কারণেই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মহিলা ভোট ব্যাঙ্কের দিকে। তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসে শক্তি সঞ্চয় করা হচ্ছে। ঘন ঘন কর্মিসভা করা হচ্ছে। আজকের কর্মিসভা থেকে দলের নিচু তলার কর্মীদের কাছে সেই বার্তাই আরও স্পষ্ট করে দিলেন সুস্মিতা দেব, কাকলি ঘোষ দস্তিদাররা। তাঁরা বললেন, “মহিলারা আমাদের স্পেশাল ভোট ব্যাঙ্ক।”
পাশাপাশি, জোড় দেওয়া হচ্ছে জনসংযোগের উপরেও। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের কর্মীদের। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিধানসভাওয়াড়ি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলার। ২০২৩ সালের আগে সবরকমভাবে বিজেপিকে চাপে ফেলতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে কর্মীদের। তারপর সংশ্লিষ্ট মহিলার নম্বর নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ করতে বলা হয়েছে। একদিকে বিজেপির জনবিরোধী নীতি আর অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন- মূলত এই দুটি বিষয়ের উপর জোর দিতে বলা হয়েছে তৃণমূল ভবনের পক্ষ থেকে।
ত্রিপুরায় মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক প্রায় ৪৯ শতাংশ। আর এই ৪৯ শতাংশের উপর নিজেদের একচ্ছত্র অধিকার একবার পেয়ে যাওয়া মানে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ফেলে দেওয়া। এই বিষয়টি বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তৃণমূল। আর মহিলা ভোট ব্যাঙ্কের মন জিততে ঘাসফুল শিবিরের হাতিয়ার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ। বাংলার ‘মেয়ে’ মমতা যে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি নিয়েছেন, সেগুলিই ত্রিপুরায় গিয়ে বার বার প্রচার করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে আক্রমণ করা হচ্ছে ত্রিপুরার বিজেপি সরকারকেও। কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুস্মিতা দেবদের অভিযোগ, বিজেপি সরকার ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিপ্লব দেব সেখানকার মহিলাদের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেননি। মহিলাদের উপর অত্যাচারও বেড়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। আর এটাকেই হাতিয়ার করে ত্রিপুরা জয়ের দিকে পা বাড়াতে চাইছে তৃণমূল।
আরও পড়ুন : Tripura Politics: ত্রিপুরায় পা রাখবেন শুভেন্দু অধিকারী, এবার কি কোমর বাঁধছে রাজ্য বিজেপি?