তিরুঅনন্তপুরম: কেরলের ত্রিবান্দ্রামের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছেই অবস্থিত এক পুরনো বাসস্ট্যান্ড। সেখানেই ছাত্রদের কোলে বসে আছেন ছাত্রীরা। কোনও ছাত্রের কোলে বসে একজন ছাত্রী, কোনও কোনও ছাত্রের কোলে আবার দুইজনও রয়েছেন। একেবারে গায়ে গা এলিয়ে বসে রয়েছেন ওই ছাত্রছাত্রীরা। এরকমই এক অভিনব প্রতিবাদের ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এই প্রতিবাদের নাম দিয়েছেন ল্যাপটপ প্রতিবাদ! শুধু ছাত্রদের কোলে কম্পিউটারের জায়গায় ছিলেন ছাত্রীরা। জানা গিয়েছে গত বুধবার (২০ জুলাই) এই অভিনব বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ছাত্রছাত্রীরা। প্রতিবাদ ছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের নীতি পুলিশগিরির বিরুদ্ধে।
সূত্রের খবর, ওই বাসস্ট্যান্ডে আগে যাত্রীদের বসার জন্য একটি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বেঞ্চ ছিল। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা পাশাপাশি বসে গল্পগুজব করতেন। ছেলে-মেয়েরা যাতে একে অপরের পাশে বসতে না পারে, সেই জন্য সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ওই সিমেন্টের তৈরি বেঞ্চ ভেঙে তাকে তিন ভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এমনভাবে ভাগ করা হয়েছিল, যাতে প্রতিটি আসনে মাত্র এক জনই বসতে পারেন। আর প্রতিটি আসনের মাঝেই ছিল পেল্লায় ফাঁক। এই ধরনের নীতিক পুলিশির বিরুদ্ধেই অভিনব ‘ল্যাপটপ প্রতিবাদে’ সকলকে চমকে দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি না বসতে দেওয়ায়, একে অপরের কোলে বসেই গল্প করা শুরু করে দেন ছাত্রছাত্রীরা। যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
College of Engineering Trivandrum pic.twitter.com/GLjFuaCy3Y
— aswin1018 (@aswin1018) July 20, 2022
আসলে সমস্যাটি বেশ পুরোনো। অভিযোগ, ত্রিবান্দ্রামের ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাইরের বাসস্ট্যান্ডটিতে ছাত্রছাত্রীরা প্রায়শই পাশাপাশি বসে কথা বলত। স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা এই ভাবে একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছে, এটা স্থানীয় কিছু মানুষের চক্ষুশূল হয়েছিল। এই ‘সমস্যার’ মোকাবিলায় করতেই তারা বাসস্ট্যান্ডের বসার বেঞ্চটিকে তিনটি আলাদা ভেঙে ফেলেছিল। কিন্তু, ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপ প্রতিবাদে তাদের সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে। উপরন্ত, শিক্ষার্থীদের এই অভিনব প্রতিবাদ নজর কেড়েছে শহরের মেয়র আর্য রাজেন্দ্রনেরও। বৃহস্পতিবারই তিনি ওই বাসস্ট্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘যেভাবে বেঞ্চটি ভেঙে তিন টুকরো করা হয়েছে এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা করা হয়েছে, সেটা আধুনিক সমাজের জন্য অশোভন। আমি তিরুঅনন্তপুরম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে এখানে একটি নতুন বাস স্ট্যান্ড তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছি।’
In a shameful act of moral policing, a bunch of boomers in Trivandrum cut short the long steel bench in the bus stop into single seaters to stop boys & girls sitting next to each other.
The students of College of Engineering (CET) came together in protest and how! ❤️ pic.twitter.com/UCm1lSkzHe
— Siddharth (@DearthOfSid) July 21, 2022
নন্দনা পিএম নামে, এই অভিনব ল্যাপটপ প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক ছাত্রী বলেছেন, ‘আমাদের এই ছবিটা স্থানীয় মানুষদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ছবি নয়। আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচানোর প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে চেয়েছি। আমরা যে পরিস্থিতিতে বড় হয়েছি এবং এখন যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি, তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা মনে করি না যে, সমাজ রাতারাতি বদলে যাবে। তবে, শিক্ষার্থীদের আবেগে, অনুভূতিতে আঘাত করলে প্রতিবাদ হবেই। আমাদের এই ছবিটা ভাইরাল হওয়ার পর থেকে, আমরা বহু মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। যদিও, ফেসবুকে কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও এসেছে। কিন্তু ন্যায় যখন আমাদের পক্ষে আছে, তখন এই সব সমালোচনা আমরা গায়ে মাখছি না।’ কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অশ্বিন এম বলেছেন, ‘৯ বছর আগে অবৈধভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি করেছিল। এই বাসস্ট্যান্ডে বসা শিক্ষার্থীরা বহু বছর ধরেই সমস্যায় ভুগছেন। ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বসলে, স্থানীয় লোকজন তাদেরকে লক্ষ্য করে অশালীন মন্তব্যও করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।’