Legal Age of Marriage: বিশ্লেষণ: মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স একুশ করার পিছনে কী যুক্তি?

Minimum age of Marriage: এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন ২০০৬, বিশেষ বিবাহ আইন এবং হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫ সংশোধনী বিল সংসদে পাশ করানো।

Legal Age of Marriage: বিশ্লেষণ: মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স একুশ করার পিছনে কী যুক্তি?
মেয়েদের ন্যূনতম বিবাহের বয়স একুশ করার পিছনে কী যুক্তি কাজ করছে?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 17, 2021 | 10:18 PM

সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো’ নাকি থামতে জানে না। এ বয়স এতটাই দুঃসহ, স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি। বাস্তবে সত্যিই কি সেই আঠারো এতটা দুঃসাহসিক! আঠারোর আঙিনায় পা দিলেই ডানা মেলার স্বপ্ন মুড়িয়ে কত মেয়েকে বাধ্য হতে হয় শুধু মাত্র ছাতনাতলায় বসতে। অকালে পড়াশুনা ছেড়ে সংসারযাপন। সন্তান পালন। হেঁসেল ঠেলতে ঠেলতেই জীবনের অর্ধেকটা অতিবাহিত হয়ে যায় তাঁদের। স্বপ্ন গড়ার সন্ধিক্ষণে এসে তাঁদের তরী কীভাবে যেন ডুবে যায়! তাই, জয়া জেটলির নেতৃত্বাধীন নীতি আয়োগের কমিটি প্রস্তাব দিয়েছে, এই আঠারো বাড়িয়ে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স করা হোক একুশ।

বুধবার, নীতি আয়োগের এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে মন্ত্রিসভায়। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন ২০০৬, বিশেষ বিবাহ আইন এবং হিন্দু বিবাহ আইন ১৯৫৫ সংশোধনী বিল সংসদে পাশ করানো। প্রশ্ন হল, মেয়েদের ন্যূনতম বিবাহের বয়স একুশ করার পিছনে কী যুক্তি কাজ করছে? এই আইন পাশের পরও মেয়েদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আদৌ কি উন্নতি হবে? বিবাহের বয়স একুশ করলে তার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক কী প্রভাব পড়তে পারে সমাজে?

সরকারের ভাবনা-চিন্তা

গত বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে সরকার। দেশের কোনও মেয়েই যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে তার জন্য সঠিক সময়ে বিয়ের প্রয়োজন। সরকার টাস্ক ফোর্স তৈরি করে সঠিক পদক্ষেপ করবে দ্রুত। গত বছর জুনেই সেই টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়। টাস্ক ফোর্সে ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রক, শিক্ষা ও সাক্ষরতা মন্ত্রক এবং আইন মন্ত্রকের সচিবরা। এছাড়াও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য নাজমা আখতার, এসএনডিটি উমেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য এবং গুজরাটের স্বনামধন্য স্ত্রীরোগ চিকিৎসক দীপ্তি শাহ। এই কমিটির মাথায় ছিলেন সমতা পার্টির সভাপতি জয়া জেটলি এবং নীতি আয়োগের সদস্য ডক্টর ভি কে পল। এই কমিটির উদ্দেশ্য ছিল, বিবাহযোগ্যা মহিলাদের অপুষ্টি, রক্তাল্পতা-সহ একাধিক শারীরিক এবং সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে অবগত হওয়া।

কীসের ভিত্তিতে নীতি আয়োগ কমিটির এই প্রস্তাব

গত এক বছর ধরে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে জেটলির কমিটি। ওই কমিটির দাবি, দেশের ১৬ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। প্রত্যন্ত গ্রামে এবং আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে ১৫টি বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

নরেন্দ্র মোদীর সরকার লিঙ্গ-নিরপেক্ষতা সহ বেশ কয়েকটি ইস্যুকে সামনে রেখে মহিলাদের জন্য বিবাহের ন্যূনতম বয়স পুনরায় পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কম বয়সে বিয়ে হলে অনেকক্ষেত্রেই তুলনামূলক কম বয়সে গর্ভধারণের ঘটনা দেখা যায়। এর ফলে মা এবং তাঁর সন্তানদের পুষ্টির স্তর এবং তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার উপরও প্রভাব পড়ে। এর পাশাপাশি শিশু মৃত্যুর হার এবং মাতৃ মৃত্যুর হারের উপরও প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান দুটি ধাপ শিক্ষা ও জীবিকা অর্জন – এর থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যান মহিলারা।

Legal Age of Marriage

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিবাহের ন্যূনতম বয়স

সম্প্রতি ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (NFHS) প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, দেশে বাল্যবিবাহ ২০১৫-১৬ সালে ২৭ শতাংশ ছিল। এখন ২০১৯-২০ সালে তা ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু সরকার এটি আরও কমিয়ে আনতে জোর দিচ্ছে।

জয়া জেটলি কমিটি কেন গঠিত হয়েছিল?

২০২০ সালের জুন মাসে মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক মহিলাদের পুষ্টি, রক্তস্বল্পতার প্রাদুর্ভাব, আইএমআর, এমএমআর এবং অন্যান্য সামাজিক সূচকের সমস্যাগুলির সঙ্গে বিবাহের বয়সের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করে।

সমতা পার্টির প্রাক্তন সভাপতি জয়া জেটলির নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ডাঃ ভি কে পল এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রকের সচিবও ছিলেন। এই কমিটি বিয়ের বয়স বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা এবং নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উপর কম বয়সে বিয়ের প্রভাব, সেইসঙ্গে কীভাবে মহিলাদের শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো যায় তা দেখার জন্য গঠিত ছিল।

জয়া জেটলি কমিটির সুপারিশ

দেশের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে কমিটি বিয়ের বয়স বাড়িয়ে ২১ বছর করার সুপারিশ করে। ১৫ টিরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। কমিটির তরফে বলা হয়, সকল ধর্মের যুবকদের পাশাপাশি গ্রামীণ ও শহরাঞ্চল থেকে সমানভাবে মতামত নেওয়া হয়েছে।

সুপারিশে মেয়েদের স্কুল ও কলেজে প্রবেশাধিকার বাড়ানোর দিকে নজর দিতে সরকারকে অনুরোধ করেছে কমিটি। দূরের এলাকা থেকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পরিবহন থেকে শুরু করে স্কুলে যৌন শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিটি আরও জানায়, যতক্ষণ না এগুলি বাস্তবায়ন করা হয় এবং নারীর ক্ষমতায়ন না হয়, ততদিন আইন করলেও তা ততটা কার্যকর হবে না। কমিটি আরও সুপারিশ করেছে যে বিয়ের বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে এবং নতুন আইনের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়ানোর জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার থেকে মানুষের ব্যবহারিক পরিবর্তন আনা অনেক বেশি কার্যকর হবে।

সমালোচকদের কথায়

শিশু ও নারী অধিকার রক্ষা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন এবং সেই সঙ্গে জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা মহিলাদের জন্য বিয়ের বয়স বাড়ানোর পক্ষে ছিলেন না। কারণ এই ধরনের আইনের ফলে জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মধ্যে অবৈধ বিবাহের চল শুরু হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে বলে তাঁরা মনে করেছিলেন।

তাঁদের বক্তব্য, দেশে মহিলাদের জন্য বিবাহের বৈধ বয়স ১৮ বছর রাখা হলেও, ভারতে বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়নি। আর যা কমেছে, তা আইনের জন্য নয় বরং মেয়েদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির কারণে এই ধরনের বিয়ে কমেছে।