মোদীনগর: সুস্থ অবস্থাতেই ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু বাড়ি ফিরেছিল কেবল মৃতদেহ। সন্তানের মৃত্যুর জন্য স্কুল প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন সন্তান হারা মা। সুবিচারের দাবিতে থানার বাইরে বসেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। তবে সুবিচারের আশ্বাস নয়, বরং জুটল আধিকারিকের ভর্ৎসনাই। সম্প্রতিই গাজিয়াবাদের স্কুলবাস দুর্ঘটনায় ১০ বছরের এক কিশোরের মৃত্যু হয়। মৃত ওই কিশোরের অভিভাবকের অভিযোগ, স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই তাদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে সরকারি আধিকারিক আঙুল তুলে বলেন, “ব্যাস! চুপ”।
দিল্লির কাছেই অবস্থিত গাজিয়াবাদের মোদীনগরে ঘটনাটি ঘটেছে। বুধবার অনুরাগ ভরদ্বাজ নামক ১০ বছরের ওই কিশোর স্কুল বাসে করে ফেরার সময় দুর্ঘটনায় মারা যায়। জানা গিয়েছে, ওই কিশোরের শরীর খারাপ লাগায় সে জানলা থেকে মুখ বের করেছিল। সেই সময়ই রাস্তার ধারের একটি ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে তাঁর মাথা ঠুকে যায়। সঙ্গে সঙ্গে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ওই কিশোর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের অভিযোগের পর ওই বাসচালক ও বাসে উপস্থিত অপর এক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু স্কুলের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।
ছেলের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে ও স্কুলের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের দাবিতে বৃহস্পতিবারই মোদীনগর থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁর মা ও পরিবারের বাকি সদস্যরা। ভিডিয়োয় দেখা যায়, মৃত ওই কিশোরের মা নেহা ভরদ্বাজ তাঁর স্বামী, মেয়ে ও অন্যান্য অভিভাবকদের সঙ্গে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এমন সময়ই মোদীনগরের সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট শুভাঙ্গী শুক্লা মৃত ওই কিশোরের মায়ের উপরে চিৎকার করে ওঠেন। তিনি বলেন, “কেন বুঝতে পারছেন না? আমি আপনাকে চুপ করে থাকতে বলছি তো।”
চোখের জল মুছতে মুছতেই মৃত কিশোরের মা বলেন, “ও কি আপনার সন্তান ছিল?” , সঙ্গে সঙ্গেই ওই আধিকারিক ফের চিৎকার করে বলেন, “কতবার আপনাকে বোঝাতে হবে?”। এর জবাবে ওই মহিলা বলেন, “আমি অনেক বুঝেছি। ও (নিজের ছেলের কথা উল্লেখ করে) তাই চুপ করে গিয়েছে চিরদিনের জন্য।”
গোটা ঘটনাটি জানতে পেরেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তদন্তের রিপোর্ট চেয়েছেন। স্কুল, বাস ও পরিবহন দফতরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়াও স্কুলবাসের স্বাস্থ্যপরীক্ষারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুরাগের পরিবারের অভিযোগ, স্কুলবাসে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। একসঙ্গে প্রচুর পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তাদের উপর নজর রাখার জন্যও কেউ ছিল না।