লখনউ: আদালতের প্রশ্নে এবার পাল্টি খেল যোগী সরকার। গত বছর নভেম্বর মাসে উত্তর প্রদেশে ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইন (Anti-conversion Act) পাশ হওয়ার পরই নাদিম নামক এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিস। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, পারুল নামক এক বিবাহিত মহিলাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে নাদিম ও তাঁর ভাই। এই অভিযোগের বিরুদ্ধেই এলাহাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানায় অভিযুক্ত। সেই মামলার শুনানিতেই বৃহস্পতিবার যোগী সরকারের তরফে জানানো হয়, জোর করে ধর্মান্তরিত করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গতবছরের ২৭ নভেম্বর ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে সম্মতি দেওয়ার দুদিন পরই নাদিম(৩২) ও তাঁর ভাই সলমনের বিরুদ্ধে ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে অভিযোগ দায়ের করেন অক্ষয় কুমার ত্যাগী নামক এক ব্যক্তি। একটি নামী ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থায় কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন নাদিম, সেখানেই কর্মচারী নিয়োগ করতেন অক্ষয়। অভিযোগপত্রে অক্ষয় জানান, নাদিম প্রায়সই মুজাফ্ফরনগরে নিজের বাড়িতে যেত। সেখানেই তাঁর স্ত্রী পারুলকে প্রেমের জালে ফাঁসায় নাদিম এবং তাঁকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টাও করছে। পারুলের মন জয় করতে নাদিম তাঁকে একটি স্মার্টফোনও উপহার দিয়েছে এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
অভিযোগ পাওয়ার পরই নাদিম ও তাঁর ভাইকে গ্রেফতার করে উত্তর প্রদেশ পুলিস (Uttar pradesh Police)। এরপরই এলাহাবাদ হাইকোর্টে (Allahabad High Court) আর্জি জানায় অভিযুক্তরা। আদালতে এই আর্জি গ্রহণ করে পুলিসকে আগামী শুনানি অবধি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করার নির্দেশ দেয়। গ্রেফতারি থেকেও অভিযুক্তদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে আদালত। আজকের শুনানিতে সেই সুরক্ষা আরও বাড়িয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি অবধি করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘দেশবাসীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস এনেছে ভ্যাকসিন আবিষ্কার’,পশ্চিম ফ্রেট করিডরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
উত্তর প্রদেশ সরকারের তরফে আজ ছয় পাতার একটি হলফনামা (Affidavit) জমা দেওয়া হয়। সেই হলফনামায় বলা হয়, “তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন যে এটি ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনের মামলা নয়। অভিযুক্ত নাদিম যে পারুলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে রয়েছে বা ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছে, এমন কোনও প্রমাণই মেলেনি। তবে নাদিম যে অক্ষয়কে হুমকি দিয়েছিল, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে তদন্তে এবং এর প্রেক্ষিতে ৩১ ডিসেম্বর একটি চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছে।”
মামলার শুনানির পর অভিযুক্তের আইনজীবী সইদ ফরমান আহমেদ নাকভি বলেন, “আজ আদালতে রাজ্যের তরফে জমা দেওয়া হলফনামায় বলা হয়েছে ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যে এবং তদন্তে জোর করে ধর্মান্তরিত করার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে একজন ব্যক্তির নিজের ধর্ম বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে । এক্ষেত্রে সরকার ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।”
আজ মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলে, “নির্যাতিতা একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং সে তাঁর নিজের ভাল-মন্দ বোঝে। তিনি এবং আবেদনকারী -উভয়েরই ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। তাঁরা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ বা ফলাফল সম্পর্কেও অবগত।”
ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনের একমাস পূর্ণ হতেই রাজ্য সরকারের তরফে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৩০ দিনেই ধর্মান্তকরণ বিরোধী আইনে (Anti-Conversion Act) ১৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিস। গ্রেফতারও করা হয়েছে ৫১ জনকে। এদের মধ্যে ছাড়া পেয়েছেন মাত্র দুইজন, বাকি ৪৯ জনই এখনও গারদের পিছনেই রয়েছে। দায়ের করা ১৪টি মামলার মধ্যে ১৩টি মামলাতেই হিন্দু মহিলাকে জোর করে মুসলিম ধর্মগ্রহণ করানো হয়েছে। কেবলমাত্র দুটি মামলার ক্ষেত্রে নির্যাতিতা মহিলারা নিজেই ধর্মান্তকরণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাকি অভিযোগগুলি তাঁদের পরিবারের তরফ থেকেই এসেছে।
আরও পড়ুন: ‘মনমোহন মনোনীত, মোদী প্রধানমন্ত্রিত্ব অর্জন করেছেন’