উত্তরকাশী: ১৭ দিনের অপেক্ষার অবসান। সমস্ত বিপদ কাটিয়ে, সুরক্ষিতভাবেই সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ উদ্ধারকাজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়া মাত্রই, ৪১ জন শ্রমিককে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সুড়ঙ্গ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা হয়। শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই, তাদের প্রয়োজন অনুসারে দেহরাদুনের এইমস বা দিল্লির বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আর এই শ্রমিকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যই অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই এয়ারস্ট্রিপে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনার টুইন রোটর হেভি লিফ্ট চিনুক হেলিকপ্টার।
ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজন হলেই চিনুক হেলিকপ্টারে এয়ারলিফ্ট করে আনা হবে শ্রমিকদের। দেহরাদুন ও ঋষিকেশ এইমসও প্রস্তুত রয়েছে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য। দীর্ঘদিন পরিবারের থেকে দূরে থাকার কারণে শ্রমিকদের হাসপাতালে ভর্তি রাখা হলে, তাদের সঙ্গে সর্বক্ষণ উপস্থিত থাকবেন পরিবারের সদস্য। সেইরকমভাবেই যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভারতীয় বায়ুসেনা শ্রমিকদের এয়ারলিফ্ট করে হাসপাতালে আনার জন্য সি-১৭, সি-১৩০জে বিমানের বদলে চিনুক হেলিকপ্টারই বেছে নিয়েছে। অবশ্য তার একাধিক কারণও রয়েছে। চিনুকের নির্মাণকারী সংস্থা বোয়িং জানিয়েছে, দীর্ঘ উচ্চতায় ভারী বহন ক্ষমতা বা হেভি পে-লোড বহন করতে সক্ষম চিনুক। সেই কারণেই হিমালয়ের কোলে উদ্ধারকাজের জন্য সাধারণত এমআই-১৭ বা সিএইচ৪৭ চিনুক হেলিকপ্টারই ব্যবহার করে। সি-১৭ বা সি-১৩০জে-র মতো বিমান উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হলেও, পাহাড়ের কোলে যেহেতু এয়ারস্ট্রিপ খুব সীমিত হয়, সেই কারণে এই বিমান ওঠানামায় ঝুঁকি থাকে। সেখানেই সহজে ল্যান্ড করানো যায় চিনুক হেলিকপ্টার।
এছাড়া চিনুক হেলিকপ্টারে একবারে ৪৪ জনকে বহন করা যায়। সর্বোচ্চ ২৪টি স্ট্রেচার ধরে চিনুকের ভিতরে। যদি উত্তরকাশীর শ্রমিকদের ঋষিকেশের এইমসে নিয়ে যেতে হয়, তবে দুই ট্রিপেই সেই কাজ সেরে ফেলবে চিনুক। সেই তুলনায় এমআই-১৭ হেলিকপ্টারে সর্বাধিক ২৫ জনকে বহন করা যায়। যদি কর্মীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে হয়, তবে চিনুকের তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগবে।
উত্তরাখণ্ডে এই প্রথম সুড়ঙ্গে বিপর্যয় ঘটেনি। এর আগে ২০২১ সালেও উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে হিমবাহে ফাটল ধরে হড়পা বান নামায় একটি সুড়ঙ্গের ভিতরে কাদামাটিতে আটকে পড়েছিলেন ১৩০ জন শ্রমিক। সেই সময়ও চিনুক হেলিকপ্টারে করেই ১৪ জন ১৪০০ কেজি ত্রাণ সামগ্রী চামোলিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ কর্মীদের জন্য।