Dattatreya Hosabale: ‘আধ্যাত্মিকতা আমাদের সংস্কৃতির আত্মা’, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বললেন দত্তাত্রেয় হোসবালে

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Feb 01, 2024 | 6:30 AM

8th International Conference and Gathering of Elders: অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী চোনা মীন বলে, "উত্তর-পূর্ব ভারত দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের কাজ করছে। অরুণাচল প্রদেশ সরকারও আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এর জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছি। স্কুলেও বিভিন্ন পাঠক্রম শুরু করেছি। পল্লী গীতি ও পল্লীছড়াগুলিকে ডিজিটালাইজ করেছি।"

Dattatreya Hosabale: আধ্যাত্মিকতা আমাদের সংস্কৃতির আত্মা, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বললেন দত্তাত্রেয় হোসবালে
দত্তাত্রেয় হোসাবলে।
Image Credit source: Twitter

Follow Us

ডিব্রুগড়: অসমের ডিব্রুগড়ে অনুষ্ঠিত হল অষ্টম আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ২৮ জানুয়ারি এই সম্মেলন শুরু হয়েছিল। আর সমাপ্তি অনুষ্ঠান হল বুধবার, ৩১ জানুয়ারি। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরএসএসের সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবালে। ছিলেন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু। অরুণাচল প্রদেশের উপ-মুখ্যমন্ত্রী চোনা মীনও উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের আয়োজন করেছিল আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক অধ্যয়ন কেন্দ্র (আইসিসিএস)। বুধবার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের সংস্কৃতির কথা তুলে ধরেন আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসবালে।

আইসিসিএস-র সভাপতি শশী বালা অতিথিদের সংবর্ধনা জানান। এই সম্মেলনে ৩৩টির বেশি দেশের ১২৫ জন বিদেশি অতিথি উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন সম্মেলনে। সবমিলিয়ে দেশ ও বিদেশ মিলিয়ে ৪০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। ২৮ জানুয়ারি সম্মেলনের প্রথম দিন ডিব্রুগড়ে একটি মিছিল হয়। সেখানে প্রত্যেকে তাঁর দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে দত্তাত্রেয় হোসাবলে বলেন “আধ্যাত্মিকতা প্রাচীন ঐতিহ্যের একটি দিক। প্রতিটি জীবের মধ্যে দেবত্বের উপস্থিতি রয়েছে। আমাদের পৃথিবী প্রত্যেক জীবের জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ করে। এখন এই দেবত্ব বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের। আধ্যাত্মিকতা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রাণ। সব সংস্কৃতিতেই মিল আছে। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যই পৃথিবীর একমাত্র ঐতিহ্য যা নারীকে দেবত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়াও, এই ঐতিহ্যগুলি পারিবারিক মূল্যবোধ এবং সাধারণ জীবনধারায় জীবনযাপনের উপর জোর দেয়।”

তিনি আরও বলেন, ” সমৃদ্ধির জন্য ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করা, পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শাসন অপরিহার্য। নির্ভরশীল ব্যবহারের মাধ্যমেই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন পরিপূরকের। সমৃদ্ধি সমানভাবে ভাগ করতে হবে। তবে উন্নয়ন যেন ধরিত্রীকে নষ্ট করে না হয়।”

সমুদ্র মন্থনের উদাহরণ দিয়ে দত্তাত্রেয় হোসাবলে বলেন, “লক্ষ্মী, যিনি সমৃদ্ধির দেবী, বহু চেষ্টার পর তিনি এসেছিলেন। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য মন্থনের প্রয়োজন। এই কনফারেন্সেও আমরা চারদিন ধরে মন্থন করছি, এখান থেকে অমৃত উঠে আসবে। সমৃদ্ধির আরেকটি অংশ হল শঙ্খ। পুজোর সময়ে শঙ্খ বাজানো হয়। আমাদের গুরুজনরা অত্যন্ত নম্রভাবে গল্পের মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়েছেন যে সমৃদ্ধি যেন সবার জন্য সমান ও নির্ভরশীল হয়। পৃথিবী আমাদের যাবতীয় রসদ সরবরাহ করে, এখন আমাদের দায়িত্ব এই পৃথিবীকে সংরক্ষণ করা।”

তিনি দানান, সরকার সম্মেলনের জন্য তিনটি ফলো-আপ অ্যাকশন পয়েন্টের উপর জোর দিয়েছে। প্রথমত, আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রত্নসামগ্রীর মতো আলংকারিক জাদুঘরে সংরক্ষণ করার জন্য নয়। প্রাচীন জ্ঞান এবং বিশ্বাস ব্যবস্থা পৃথিবীতে জীবন্ত ঐতিহ্য। তাদের সামাজিক মূলধারার অংশ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনধারা হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসী সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য এটাই একমাত্র উপায়। সুতরাং, এই মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পাঠানো উচিত। তৃতীয়ত, অগ্রগতি এবং বৈষয়িক উন্নয়নের জন্য প্রতিটি সম্প্রদায়ের জন্য সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

অরুণাচল প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী চোনা মীন বলে, “উত্তর-পূর্ব ভারত দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কৃতিকে সংরক্ষণের কাজ করছে। অরুণাচল প্রদেশ সরকারও আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এর জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছি। স্কুলেও বিভিন্ন পাঠক্রম শুরু করেছি। পল্লী গীতি ও পল্লীছড়াগুলিকে ডিজিটালাইজ করেছি। আমরা জানি যে কীভাবে আদিবাসীরা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রকে সংরক্ষণ করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আদিবাসী সমাজের বৈচিত্র ও সমতাকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। নিজেদের অংশ করে নিতে হবে। স্কুল-কলেজের উন্নয়ন ও সংস্কৃতির সংরক্ষণের জন্য আমরা ১০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছি।”

অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডুও আইসিসিএস-কে অভিনন্দন জানান এই সফল অনুষ্ঠানের জন্য। তিনি বলেন, “সমাজে সম্প্রীতি তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অত্যন্ত ভাল অবস্থান ভারতের। গোটা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে আমাদের দেশ। অরুণাচল প্রদেশে ২৬টি আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে, এদের মধ্য়ে অধিকাংশই মিলেমিশে সম্প্রীতিতে দীর্ঘসময় ধরে বসবাস করছে। অরুণাচল সরকারের নীতি হল এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ। ইটানগরে নতুন গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরের নামও দোনভি পোলো এয়ারপোর্ট রাখা হয়েছে আদিবাসী সমাজকে সম্মান জানিয়েই। অরুণাচল প্রদেশে দোনভি শব্দের অর্থ হল সূর্যমাতা ও পোলো শব্দের অর্থ হল চাঁদ।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশে তিনটি গুরুকুল তৈরি করা হয়েছে আদিবাসী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ ও তা নিয়ে শিক্ষার প্রচারে। ইয়ুথ ফেস্টিভালেরও আয়োজন করা হয় প্রতি বছর। অরুণাচল প্রদেশের ২০ জন পড়ুয়াকে উচ্চশিক্ষার জন্য পুণেতে পাঠানো হয়েছে। আরও ১৪ জন আদিবাসী পড়ুয়াকে পাঠানো হবে। ৩ হাজার পুজারীকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রার্ড পুজারীদের সরকারি পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছে। অরুণাচল প্রদেশ ইতিমধ্যেই ১২টি পণ্যে জিআই ট্য়াগ পেয়েছে। আরও ১৬টি পণ্য জিআই ট্যাগ পাওয়ার পথে রয়েছে।

Next Article