জম্মু: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে জার্মান সংস্থা ‘কোয়ান্টাম সিস্টেমস’-এর তৈরি ‘ভেক্টর এবং স্কর্পিয়ান’ ড্রোন। ইতিমধ্যেই মার্কিন মেরিন কর্পস, ফরাসি পুলিশ এবং জার্মান পুলিশ এই ড্রোন ব্যবহার করছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, এবার এই ড্রোনের অন্তর্ভুক্তি ঘটতে চলেছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে। তার আগে জুলাই মাস জুড়ে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর এলাকায় এই ড্রোনের কার্যকারিতার পরীক্ষা করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হলে, ৬৫ কিলোমিটার টেলিমেট্রিক পাল্লার এই ড্রোনটিই হবে ভারতের দীর্ঘতম পাল্লার ড্রোন।
‘ভেক্টর এবং স্কর্পিয়ান’ ড্রোন হল একটি টু-ইন-ওয়ান ড্রোন, অর্থাৎ, একটিই ড্রোনকে দুইভাবে ব্যবহার করা যায়। এই মনুষ্যবিহীন এরিয়াল সিস্টেমটি মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং শত্রুপক্ষের শক্তি মাপতে ব্যবহার করা হয়। নির্মাতাদের দাবি, সারা বিশ্বের রুক্ষ ভূখণ্ড এবং শহুরে পরিবেশে বর্তমানে এই ড্রোনই কার্যকারিতার দিক থেকে সেরা। ভারতের জন্য এই ড্রোন তৈরি করছে কোয়ান্টাম সিস্টেমস-এর ভারতীয় অংশীদার রোটার প্রিসিসন ইন্সট্রুমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে সংস্থার ভাইস-প্রেসিডেন্ট কুশাগ্র আগরওয়াল বলেছেন, ‘এটিই প্রথম ড্রোন, যার টেলিমেট্রিক রেঞ্জ ৬৫ কিলোমিটার। মানে ধরুন, যদি আমি উধমপুরে থাকি, ড্রোনটি আমাকে জম্মু থেকে লাইভ ফিড দিতে পারে’।
আগেই বলা হয়েছে ‘ভেক্টর এবং স্করপিয়ন’ হল একটিই ড্রোনের দুটি পৃথক রূপ। ভেক্টর হল একটি নমনীয় হাইব্রিড ভার্টিক্যাল টেক-অফ অ্যান্ড ল্যান্ডিং বা ভিটিওএল (VTOL) ড্রোন। অর্থাৎ, ড্রোনটি উল্লম্বভাবে উড়তে এবং ল্যান্ড করতে পারে। এটি একটানা ১২০ মিনিট উড়তে পারে, সেই সঙ্গে ১৫ কিমি দূর পর্যন্ত রেডিও যোগাযোগ রাখতে পারে। সেই রেডিও যোগে যে তথ্য যায়, তা সামরিক স্তরের এনক্রিপ্ট করা আইপি ডেটা লিঙ্ক-এর মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকে। নির্ভুল এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক-অফ এবং ল্যান্ডিং-এর সুবিধা থাকায় ভেক্টর ড্রোন পরিচালনা করতে মাত্র একজন ব্যক্তিই যথেষ্ট।
ভেক্টর যেখানে একটি ফিক্সড উইং ড্রোন (একটিই স্থির ডানা থাকে), স্করপিয়ন হল একটি ট্রাইকপ্টার। ভেক্টর ড্রোনের ডানা এবং লেজ খুলে দিয়ে একটি পৃথক সেটের ঘুর্নায়মান ডানা সংযুক্ত করে খুব সহজেই ট্রাইকপ্টার কনফিগারেশনের স্করপিও ড্রোনে রূপান্তরিত করা যায়। বৈচিত্রময় শহুরে পরিবেশে কোনও ড্রোনের একই সঙ্গে সামনে এগোনো এবং এক জায়গায় ভেসে থাকার মতো দক্ষতা প্রয়োজন। স্করপিয়ন ড্রোন ঠিক এই কাজটাই করে। এর রেডিও লিঙ্কের পরিসীমা ১৫ কিমি এবং এটি ৪৫ মিনিট পর্যন্ত উড়তে পারে। শুধুমাত্র একটি সিস্টেম দিয়েই দুই পৃথক ভূমিকায় ড্রোনটিকে পরিচালনা করা যায়।
তাছাড়া, ‘ভেক্টর এবং স্করপিয়ন’ ড্রোন আইপি ৬৬-রেটেড (জলের ছিটে কতটা সহ্য করতে পারে তার পরিমাপক) ড্রোন। অর্থাৎ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হোক, কিংবা তুষারপাত – ড্রোনের উড়ানে ব্যাঘাত ঘটবে না। সেই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। নির্মাতাদের আরও দাবি, সবচেয়ে রুক্ষ ভূখণ্ডেও, এটি অত্যন্ত কম শব্দ তৈরি করেই ওড়ানো যায়। এর জন্য ড্রোনটিতে দেওয়া হয়েছে মোটর বন্ধ করে কিংবা নীরবে চালানোর মতো বিকল্প। আর কোনও অভিযানের জন্য তৈরি হতে ড্রোনটির সময় লাগে দুই মিনিটেরও কম।
কুশাগ্র আগরওয়াল জানিয়েছেন, তাঁর সংস্থা ভারতে গত বছরই প্রথম এই ড্রোন সামনে এনেছিল। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে, সেনাবাহিনীর নর্থ কমান্ডের সদর দফতরে ‘নর্থ টেক সিম্পোজিয়াম ২০২২’-এ ‘ভেক্টর এবং স্কর্পিয়ান’ ড্রোনের কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়েছিল। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগের কর্তারা ব্যাপক প্রশংসা করেছিলেন।