লখনউ: গ্যাংস্টার বিকাশ দুবের এনকাউন্টার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন উঠলেও কমিটির কাছে কোনও তথ্য প্রমাণ জমা না পড়ায় ক্লিনচিট দেওয়া হল উত্তর প্রদেস পুলিশকে। গত বছরের জুলাই মাসে কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ দুবেকে ধরতে গিয়ে গুলির লড়াইয়ে প্রাণ হারান আটজন পুলিশকর্মী। কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয় বিকাশ দুবেকে। কিন্তু উত্তর প্রদেশ নিয়ে যাওয়ার পথেই পুলিশের গাড়ি উলটে যায় এবং ঘটনাস্থান থেকে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ। তখনই বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গতবছরের জুলাই মাসে। ৩ জুলাই গোপনসূত্রে কুখ্যাত অপরাধী বিকাশ দুবের উপস্থিতির কথা জানতে পেরেই অভিযান চালায় কানপুর পুলিশ। কিন্তু দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান কানপুর পুলিশের ডেপুটি সুপার সহ আট পুলিশকর্মী৷ এরপরই বিকাশকে গ্রেফতার করতে উঠে-পড়ে লাগে পুলিশ। নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে ৯ জুলাই ভোরে মধ্য প্রদেশের মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। পরেরদিন মধ্য প্রদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ নিয়ে আসার পথে কানপুরের একটি টোল প্লাজার সামনে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে, মাঝপথেই উলটে যায় এসটিএফ বাহিনীর গাড়ি।
পুলিশের দাবি ছিল, ক্রমাগত সংবাদ মাধ্যমের গাড়িগুলি অনুসরণ করায় দ্রুত গতিতে ছুটছিল গাড়ি। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় টাল সামলাতে না পেরে উলটে যায় পুলিশের কনভয়। দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পরই বিকাশ পুলিশকর্মীদের হাত থেকে বন্দুক ছিনিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তাঁকে আটকাতে বাধ্য হয়ে গুলি চালায় পুলিশ। চারটি গুলি বিকাশের বুকে লাগে। ঘটনাস্থানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
যদিও একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, মধ্য প্রদেশ থেকে যে গাড়িতে করে বিকাশকে উত্তর প্রদেশে নিয়ে আসা হচ্ছিল, সেই গাড়িটি উলটে যায়নি, বরং পিছনে থাকা অন্য একটি গাড়ি উলটে গিয়েছিল। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই হাইওয়েতে ব্যারিকেড দিয়ে সংবাদমাধ্যমের গাড়িগুলিকে আটকে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। দাবি করা হয়, আট পুলিশকর্মীর মৃত্যুর বদলা নিতে ও দ্রুত মামলা শেষ করতেই পরিকল্পিতভাবে বিকাশ দুবের এনকাউন্টার করা হয়েছে।
গোটা এনকাউন্টারের তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন জমা পড়ায় তিন সদস্যের একটি বিশেষ বিচার বিভাগীয় প্যানেল গঠন করা হয়। এ দিন, সেই প্যানেলের সদস্যরাই জানান, ভুয়ো এনকাউন্টারের স্বপক্ষে কোনও তথ্য প্রমাণ জমা পড়েনি। কমিশনের প্রধান বিচারপতি বিএস চৌহান জানান, বহু অনুরোধ করা হলেও কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ জমা দিতে এগিয়ে আসেনি। আমরা তথ্য জোগাড় করতে সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার কাছ থেকে সাহায্য চাইলেও কেউ কোনও প্রমাণ জমা দেয়নি। এমনকি, তদন্তকারী কমিশনের তরফে স্থানীয় সংবাদপত্রে এই বিষয়ে নোটিস প্রকাশ করা হলেও কেউ সহযোগিতা করেননি। প্যানেলের তরফে বলা হয়, “সংবাদ মাধ্যম ও সাধারণ মানুষের অসহযোগিতা প্যানেল গঠনের উদ্দেশ্যকেই ব্যর্থ করে দিয়েছে। ”
সূত্র অনুযায়ী, বিকাশ দুবের স্ত্রী বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ভুয়ো এনকাউন্টারের দাবি তুললেও , তাঁদের প্রমাণ বা বয়ান দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলে তাঁরা পিছিয়ে যান।
মামলার শুনানির আগেই সংবামাধ্যমের ট্রায়াল চালানোর সমালোচনা করে প্যানেলের তরফে বলা হয়, “সংবাদ মাধ্যম কেন উত্তর প্রদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে এগিয়ে এল না? তারা তো এত চিৎকার-চেঁচামেঁচি করেছিল প্যানেলের অনুরোধ করা সত্ত্বেও। সংবাদ মাধ্যমের উচিত নিজেদের বক্তব্য নিয়ে সচেতন হওয়া। তাঁদের উচিত ছিল কমিশনকে সাহায্য করা।”
তবে কমিশনের রিপোর্টে উত্তর প্রদেশ পুলিশকেও সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁরা বিনা প্রস্তুতিতেই বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করতে গিয়েছিল। একইসঙ্গে পুলিশকে একাধিক পরামর্শও দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফে।