নয়া দিল্লি: জোট ভাঙার দায় কি তৃণমূলের ঘাড়ে ঠেলতে চেয়েছিল কংগ্রেস? তৃণমূলের পক্ষ থেকে এর জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে অধীর চৌধুরীকে। তবে, আঙুল উঠতে শুরু করেছে কংগ্রেসের দিল্লির নেতৃত্বর দিকেও। বস্তুত, দ্বিমুখী কৌশলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলকে সামলানোর চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস নেতৃত্ব। একদিকে ক্ষিপ্ত মমতাকে সামলাতে নানাভাবে মাখন লাগানোর চেষ্টা। মমতাকে ফোন খাড়্গের, রাহুলের সুসম্পর্কের বার্তা, জোটে মমতার গুরুত্ব নিয়ে জয়রাম রমেশের বয়ান। অন্যদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য তৃণমূলকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণই জানায়নি দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব। সম্ভবত, অধীর চৌধুরীর অনড় অবস্থানকে মান্যতা দিতেই এই কৌশলী অবস্থান নিয়েছিল কগ্রেস হাই কম্যান্ড।
জোটের অন্যান্য শরিকদের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ধরনের কোনও কৌশল দেখা যায়নি। দিল্লির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসন ভাগাভাগির আলোচনার জন্য ৩১ ডিসেম্বরের চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছিলেন। তাকে গুরুত্বই দেয়নি কংগ্রেস। মুখে বারবার আলোচনায় বসার কথা বললেও, কার্যক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ করেনি কংগ্রেস ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স কমিটি। এই কমিটিই ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসছে। ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের দিনই আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার জন্য এই কমিটি গঠন করেছিল কংগ্রেস। জোটের বাকি শরিক দলগুলির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির আলোচনায় কিন্তু দেরি করেনি তারা।
শরিক দলগুলির সঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম আলোচনা শুরু হয় ৭ জানুয়ারি। দিল্লিতে আরজেডির সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসেন কংগ্রেস নেতারা। পরদিনই, অর্থাৎ, ৮ জানুয়ারি দিল্লিতেই আম আদমি পার্টি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল কংগ্রেস ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স কমিটি। ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনা হয়েছে। পঞ্জাবে জোট হবে না বলে জানিয়েছে আপ। তবে, দিল্লিতে আপ-কংগ্রেস আসনরফা মোটামুটি চূড়ান্ত।
৯ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের মহা বিকাশ আগাড়ির দুই শরিক, অর্থাৎ, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা এবং শরদ পওয়ারের এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল কংগ্রেস। সেই বৈঠকে ঐক্যমত হয়নি। শিবসেনা অনেক বেশি আসনের দাবি জানাচ্ছে বলে মনে করেছিল কংগ্রেস। গতকাল, অর্থাৎ, ২৫ জানুয়ারি আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে মুম্বইয়ে ফের একবার বৈঠকে বসেছিলেন মহা বিকাশ আগাড়ির রাজ্য স্তরের নেতারা। উত্তর প্রদেশে, ইতিমধ্যেই সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছে কংগ্রেস। শেষ বৈঠক হয়েছে ১৮ জানুয়ারি। আর, তামিলনাড়ুতে ডিএমকে এবং বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন ভাগাভাগির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। শুধু আলোচনা হয়নি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। তাহলে কি, বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করতে কখনই চায়নি কংগ্রেস? প্রশ্নটা উঠেই যাচ্ছে।