কর্ণাটক: হিজাব ইস্যুতে (Karnataka Hijab Row) কার্যত তোলপাড় হচ্ছে জাতীয় রাজনীতি। হিজাব পরার কারণে এক সরকারি কলেজে ঢুকতে বাধার মুখে পড়াকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক পড়ুয়া। সোমবার কর্ণাটক হাইকোর্টের (Karnataka High Court) একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনকারীর পক্ষে বিস্তৃত যুক্তি শুনেছে এই মামলায়। এর আগে গত শুক্রবার, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ধর্ম নির্বিশেষে সব পড়ুয়াকে শ্রেণিকক্ষে যে কোনও ধরণের ধর্মীয় পোশাক পরতে নিষেধ করেছিল। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারাধীন। আদালতের ওই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ শুধুমাত্র সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য, যাদের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন ড্রেস কোড রয়েছে।
সোমবার শুনানির শুরুতে, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সমস্ত সংবাদ মাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য বলেছেন এবং রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা লাইভ-স্ট্রিমিং করছি। মিডিয়ার কাছে আমাদের একটাই অনুরোধ, আরও দায়িত্বশীল হোন। আপনারা হলে চতুর্থ স্তম্ভ।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, আদালতের উচিত মিডিয়া হাউসগুলিকে সীমিত করে দেওয়া। অন্যান্য রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই মামলা সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনওরকম আলোচনা নিষিদ্ধ করা উচিত। তাঁর কথায়, “আমরা মিডিয়ার কাছে আবেদন করেছি। আপনারা সবাই বললে আমরা লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করে দিতে পারি। সেটা আমাদের হাতে। আমরা মিডিয়াকে থামাতে পারি না। যতদূর নির্বাচনের কথা, আপনারা ওই রাজ্যের ভোটার নন।” মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায়।
সোমবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বর্ষীয়ান আইনজীবী দেবদত্ত কামাত বেশ কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ইসলামে হিজাব পরার অধিকার এক অপরিহার্য ধর্মীয় অনুশীলন। সংবিধানের ১৪, ১৯ এবং ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই ধরনের অধিকারগুলিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই৷ আদালতে, চলতি মাসের ৫ ফেব্রুয়ারির এক সরকারি নির্দেশিকার কথাও তুলে ধরেন বর্ষীয়ান আইনজীবী দেবদত্ত কামাত। তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকার যে দাবি করছে হেডস্কার্ফ পরা সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুরক্ষিত নয় তা ‘সম্পূর্ণ ভ্রান্ত’। সেই সঙ্গে হেডস্কার্ফের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কলেজ উন্নয়ন কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের আচরণ ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’।
সেই সঙ্গে তিনি আদালতে আরও জানান, যে এক্ষেত্রে হিজাব পরার বিষয়টির ক্ষেত্রে একমাত্র বিধিনিষেধে আরোপ করা হয়েছে শান্তি শৃঙ্খলার ইস্যুতে। কিন্তু, শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা রাজ্যের দায়িত্ব বলেই জানান তিনি। সেই সঙ্গে তাঁর আরও প্রশ্ন, “বিধায়ক এবং তাঁর অনুগতদের সমন্বয়ে তৈরি একটি কলেজ উন্নয়ন কমিটি কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে এই অধিকার অনুমোদিত কিনা?”
এই সময় প্রধান বিচারপতি জানতে চান, “প্রশ্ন হল সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখিত এই অধিকারটি কি নিরঙ্কুশ অধিকার নাকি এর কোনও বিধিনিষেধও রয়েছে?” জবাবে, আইনজীবী দেবদত্ত কামাত বলেন “২৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধিকার ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে না।” কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে রাজ্যের কাছে একমাত্র শান্তি শৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।
শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি আরও প্রশ্ন করেন, “এই সরকারি নির্দেশিকার মাধ্যমে রাজ্য হেডস্কার্ফ পরার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কি না?” জবাবে আইনজীবী বলেন, সরকারি এই নির্দেশিকাটিই আদতে আইন বিরুদ্ধে। কারণ, এটি হেডস্কার্ফের অনুমতি দেওয়া বা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি কলেজ উন্নয়ন কমিটিকে দিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই হিজাব পরার গোটা বিষয়টি গোটা দেশেই অনুমোদন দেওয়া উচিত। এমনকী কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিও হিজাব পরতে নিষেধ করে না। রাজ্য কখনও বলতে পারে না এটি অপ্রয়োজনীয়। মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে আরও বলেন, পড়ুয়ারা কেউই ইউনিফর্মের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি পোশাকের কথা বলছেন না। তাঁরা বলছেন, কেবল একটি হেডস্কার্ফ পরতে দেওয়া হোক তাও সেটি নির্দিষ্ট ইউনিফর্মের সঙ্গে মানানসই একই রঙের হেডস্কার্ফ। এর পাশাপাশি, ঠিক কী কারণে শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই সম্পর্কেও কোনও কিছু বলা হয়নি সরকারি নির্দেশিকায়।
আরও পড়ুন : ‘আর্শীবাদ স্বরূপ’ সব্যসাচীর স্ত্রীকে দেওয়া শাড়িটা আসলে কার? কালীঘাটের বাড়িতে আজ অন্য মুডে মমতা
আরও পড়ুন : তৃণমূলের প্রতীক ছাড়া দাঁড়িয়ে কী ফল হয়েছিল সবাই দেখেছে! সুজিতের নিশানায় সেই সব্যসাচী