নয়া দিল্লি: বুধবার (২৬ এপ্রিল), দিল্লিতে গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার করা হল অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলকে। বারংবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে হাজিরা দেওয়া এড়ালেও, এদিন ইডির সদর দফতরে উপস্থিত হয়েছিলেন সুকন্যা। বেশ কিছু বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সদুত্তর না পাওয়াতেই শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসাররা। তৃণমৃল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডল এই গরু পাচার মামলাতেই গ্রেফতার হয়ে আপাতত তিহাড় কারাগারে বন্দি। অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে টানা-হেঁচড়া শুরু হতেই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল সুকন্যা মণ্ডলের নামও। সুকন্যা দুটি ফার্মের ডিরেক্টর পদে ছিলেন। ইডি কর্তাদের মতে, এই দুই ফার্ম আসলে ভুয়ো সংস্থা হিসেবে গরু পাচারের কালো টাকাকে সাদা করত। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কে এই সুকন্যা মণ্ডল –
অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। বীরভূমের বোলপুরে পারিবারিক বাড়িতেই থাকেন তিনি। বীরভূমের তৃনমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি পদে ছিলেন তাঁর বাবা। গত অগস্টে গরু পাচার কাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। এই মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই কর্তারা সুকন্যার দুটি সংস্থার সন্ধান পেয়েছিলেন। এএনএম অ্যাগ্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড এবং নীর ডেভেলপার প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই দুই সংস্থার ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত ছিলেন সুকন্যা। এই দুইসংস্থারই তহবিল কোথা থেকে আসছে, সেই উত্সের কোনও সন্ধান পাননি সিবিআই এবং ইডির কর্তারা। তদন্তকারীদের দাবি, গরু পাচারের বেআইনি টাকা থেকেই এই দুই সংস্থার তহবিল আসত।
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে ৩৫ পৃষ্ঠার চার্জশিট পেশ করেছে সিবিআই, তাতে দেখা গিয়েছিল সুকন্যার সম্পত্তিও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষিকা সুকন্যার ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে বার্ষিক আয় ছিল ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। পরের বছর তা বেড়ে হয়েছিল সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা। তার পরের বছর ১০ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। কিন্তু ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে যেন অনুব্রতর মেয়ের বার্ষিক আয় লং জাম্প দিয়েছিল। বেড়ে হয় ৪৯ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। তার পরের বছর আয় আরও ২ লক্ষ টাকা বাড়ে। ২০১৮-১৯ সালে ফের লং জাম্প। ওই বছর আয়কর রিটার্নে সুকন্যা তাঁর আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। ১৯-২০ সালে তাঁর আয় ছিল প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। আর ২০-২১-এ তাঁর আয় হয়েছে ৯২ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা। তবে এই হিসেবের সবই ছিল তাঁর ব্যক্তিগত আয়। তাঁর নামে থাকা চালকল বা সংস্থাগুলির আয়ের হিসাব আলাদা। এছাড়া তাঁর নামে ৩ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটও রয়েছে। ইডির আরও অভিযোগ, সুকন্যা মন্ডলকে তার নামে নিবন্ধিত বিভিন্ন সম্পত্তির বেশিরভাগই বাজার মূল্যের তুলনায় কম দামে কেনা হয়েছিল এবং অনেক বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে।