টানা পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। টানা ষষ্ঠবার মুখ্যমন্ত্রী হলে দেশে তৈরি হত নতুন রেকর্ড। কিন্তু তা হল না। লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভাতেও ধুয়ে মুছে গেল ওড়িশার বিজু জনতা দল। এর জেরে আর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া হল না নবীন পট্টনায়ক। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় থাকত নবীনের নাম। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্যে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য খ্যাতিও ছিল তাঁর। কিন্তু তা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হল না। পদ্মশিবিরের আক্রমণে অসহায়ভাবে হার মানতে হল বিজেডি-কে। কিন্তু কেন এ ভাবে পতন হল নবীন যুগের। কোন কোন কারণ উঠে আসছে এর পিছনে।
লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওড়িয়ায় হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ওড়িশার বিধানসভা নির্বাচনে নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দল (বিজেডি)-কে হারিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। ১৪৭ আসনের বিধানসভায় ৭৮টি আসন জিতেছেন তিনি। অন্য দিকে বিজেডি পেয়েছে ৫১টি আসন। কংগ্রেস পেয়েছে ১৪, সিপিএম ১টি এবং তিনটি কেন্দ্রে নির্দলরা জিতেছেন। অন্যদিকে লোকসভার ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিই জিতেছে বিজেপি। একটি কংগ্রেস।
নবীন দীর্ঘদিন ধরে ওড়িশার শাসন ক্ষমতায় রয়েছেন। দীর্ধদিন মসনদে থাকলে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নবীন পট্টনায়কের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার হাওয়া মোটেই জোরালো ছিল না। বিশ্লেষকদের মতে, ওড়িশায় নবীনের দলের সংগঠন কিছুটা হলেও দুর্বল হয়েছিল। সেই সঙ্গে বিজেপি বাড়ছিল। কিন্তু বিজেপি-র সংগঠন বৃদ্ধি নিয়ে তেমন গুরুত্ব নবীন দেননি বলে অভিযোগ তাঁরই দলের কিছু নেতার।
নবীন যে খুব জনতার মধ্যে থাকেন, এমন নয়। কিন্তু উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ওড়িশাবাসী দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পাশে থেকেছে। সরকার পরিচালনায় থেকে নবীনের আমলা নির্ভরতা বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে একজন তামিল আমলার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়ে ওড়িশাবাসীর মধ্যে ভুল বার্তাও ছড়িয়েছিল। যা নবীনের বুঝতে অনেক দেরী হয়ে যায়। তামিল আমলা কার্তিক পান্ডিয়ান নবীন পট্টনায়কের খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তার উপর দলের এবং সরকার পরিচালনার বিষয়ে প্রবলভাবে নির্ভরশীল হন নবীন। কিন্তু ওড়িশাবাসীর কাছে তা নিয়ে ভুল বার্তা যায়।
নবীনের বয়স হয়েছে। বেশ অসুস্থ তিনি। কিন্তু বিজেডি-তে তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, এ নিয়ে কোনও দিশা ছিল না দলীয় কর্মী থেকে রাজ্যবাসীর মনে। এ অবস্থায় পান্ডিয়ানের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। তিনি কী নবীনের উত্তরসূরি? এ প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করে। বিজেপিও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার করেছিল। কিন্তু তামিল পান্ডিয়ানকে ওড়িশাবাসী মেনে নিতে রাজি নয়, তা এই ফল থেকে স্পষ্ট। পান্ডিয়ান যে তাঁর উত্তরসূরি নয়, সে কথা নবীন ঘোষণা করেছিলেন ঠিকই। কিন্ত ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ভোটের কয়েক দফাও পেরিয়ে গিয়েছে। দুর্গে ফাটলের আঁচ করতে না পেরেই নবীনকে গতিচ্যুত হতে হল বলে মত বিশেষজ্ঞ মহলের।