TV9 Bangla Explained: সংকটে বরাবর দক্ষিণে ছোটেন গান্ধীরা, সনিয়া কেন বাছলেন রাজস্থান?

Feb 14, 2024 | 3:56 PM

Sonia Gandhi Rajya Sabha nomination: অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, যে কোনও সংকটের সময়, নেহেরু-গান্ধী পরিবার দক্ষিণমুখী হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু, এবার তা করলেন না সনিয়া। ঝুঁকলেন রাজস্থানে। রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে, এর কারণ নিয়ে। সনিয়া তথা কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?

TV9 Bangla Explained: সংকটে বরাবর দক্ষিণে ছোটেন গান্ধীরা, সনিয়া কেন বাছলেন রাজস্থান?
প্রতীকী ছবি
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

নয়া দিল্লি: রাজ্যসভায় যাওয়ার জন্য রাজস্থানকেই বেছে নিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি), রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে জয়পুরে এসে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। প্রায় আড়াই দশক আগে দ্বিধা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছিলেন সনিয়া। তারপর থেকে বরাবর লোকসভা নির্বাচনে লড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এবার সরে এলেন রাজ্যসভায়। তাঁর আগে, নেহেরু-গান্ধী পরিবার থেকে মাত্র একজনই রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, এক অর্থে কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। একইভাবে দলের উপর গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম রাখার লড়াই। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবথেকে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জাতীয় কংগ্রেস। অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে, যে কোনও সংকটের সময়, নেহেরু-গান্ধী পরিবার দক্ষিণমুখী হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের দিকে তাকিয়েছে। কিন্তু, এবার তা করলেন না সনিয়া। ঝুঁকলেন রাজস্থানে। রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে, এর কারণ নিয়ে। সনিয়া তথা কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?

সংকটে দক্ষিণমুখী নেহরু-গান্ধী পরিবার

কংগ্রেসের প্রথম সংকট নেমে এসেছিল জরুরি অবস্থার পর। ইন্দিরা গান্ধীর জনপ্রিয়তা তলানিতে এসে ঠেকেছিল। সেই অবস্থায়, ১৯৭৮ সালে কর্নাটকে চলে গিয়েছিলেন ইন্দিরা। চিক্কামাগালুরু উপনির্বাচনে জনতা পার্টির প্রার্থী বীরেন্দ্র পাতিলকে হারিয়ে লোকসভা সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৮০ সালে, উত্তর প্রদেশের রায়বরেলি এবং অন্ধ্র প্রদেশের মেদক (বর্তমানে তেলঙ্গানায়) – দুই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ইন্দিরা। দুই জায়গা থেকেই জয়ী হলেও, ইন্দিরা মেদক আসনকেই তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

রাজীবের মৃত্যুর পর, ফের সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল কংগ্রেস। যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে, পরবর্তী ৬-৭ বছরে ক্রমশ শক্তি হারিয়েছিল হাত শিবির। কঠিন সময়ে রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করেছিলেন সনিয়া। দলের নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালে, তাঁর রাজনৈতিক ইনিংস শুরুর জন্যও দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটককে বেছে নিয়েছিলেন সনিয়া। রাজীব গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া আমেঠি আসনের পাশাপাশি, কর্নাটকের ভেলোর আসন থেকেও মনোনয়ন জমা দেন তিনি। সনিয়াও দুই জায়গা থেকেই জিতেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমেঠিকেইতাঁর সংসদীয় কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও রাহুল গান্ধীর মানরক্ষা করেছিল কেরলের ওয়ানাড় কেন্দ্র। আমেঠি আসনে স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে হারলেও, ওয়ানাড়ই তাঁকে লোকসভায় প্রবেশাধিকার দিয়েছিল।

তাহলে এবার সনিয়া কেন রাজস্থানে?

কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য এখন আর নিয়মিত লোকসভা কেন্দ্রে যেতে পারেন না। তাই রাজ্যসভায় সরে যাচ্ছেন সনিয়া। কিন্তু, তেলঙ্গানা বা কর্নাটকের মতো রাজ্য থেকে ছেড়ে কেন রাজস্থান থেকে প্রার্থী হচ্ছেন সনিয়া? দক্ষিণের দুই রাজ্যেই সম্প্রতি কংগ্রেস তার শক্তি দেখিয়েছে। অন্যদিকে, গত বছরের শেষেই রাজস্থান থেকে বিদায় নিয়েছে কংগ্রেস সরকার। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি, তাঁর রাজ্য থেকে লোকসভার প্রার্থী হওয়ার জন্য সনিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে, কর্নাটক এবং তেলঙ্গানার কংগ্রেস কর্মীরাও তাঁদের নিজ নিজ রাজ্য থেকে সনিয়াকে রাজ্যসভায় পাঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কাজেই, দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকেই সনিয়ার মতো নেত্রীর প্রার্থী হওয়া স্বাভাবিক ছিল।

অকারণে রাজ্যসভায় যাওয়ার রাজস্থানকে বেছে নেননি সনিয়া। রাজস্থানে রাজ্যসভার তিনটি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে। একটি আসন থেকে জয় নিশ্চিত কংগ্রেসের। সূত্রের খবর, অনেক আলোচনার পরই কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, দক্ষিণ থেকে কোনোভাবেই সনিয়াকে রাজ্যসভায় পাঠানো যাবে না। কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে কর্নাটকের। রাহুল গান্ধী বর্তমানে কেরলের ওয়ানাড়ের সাংসদ। এরপর, সনিয়াকেও দক্ষিণ থেকে প্রার্থী করা হলে, কংগ্রেসের গায়ে ‘দক্ষিণের দল’ স্ট্যাম্প পড়ে যেত। গত বছরের শেষে, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, এমনিতেই কংগ্রেসকে এই নামে ডাকা শুরু হয়েছে। গত কয়েক মাসে, বিজেপির পক্ষ থেকে কৌশলে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভারতকে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। দক্ষিণের কিছু কংগ্রেস নেতার বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য, এই প্রচারে ইন্ধনও দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভার প্রার্থী হয়ে কংগ্রেস সম্ভবত বার্তা দিতে চাইছে, গান্ধী পরিবার তথা কংগ্রেস হিন্দি বলয়কে ছেড়ে যায়নি। উত্তর ভারতে কংগ্রেসের অবস্থা সবথেকে খারাপ ছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশে তারা একটি আসনও জিততে পারেনি। মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে পেয়েছিল একটি করে আসন। ছত্তীসগড় থেকে দুটি। এই অবস্থায় উত্তর ভারতে কংগ্রেসের উপস্থিতির জানান দিতেই, সনিয়ার মতো হেভিওয়েটকে রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

Next Article