পটনা: কথায় আছে, রাখে হরি তো মারে কে! তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ হল আরও একবার। ভিড় ট্রেনে উঠতে গিয়ে পিছনের ধাক্কাধাক্কিতে পা পিছলে প্ল্যাটফর্ম থেকে সোজা রেললাইনে পড়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা। সঙ্গে লাইনের মধ্যে পড়ে যায় তাঁর দুই সন্তানও। এদিকে ততক্ষণে গড়াতে শুরু করেছে ট্রেনের চাকা। চিল-চিৎকার জুড়লেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য যাত্রীরা, কিন্তু তাতে ট্রেন দাঁড়ায়নি। দুই সন্তান সহ ওই মহিলার মৃত্যু নিশ্চিত, এমনটাই ধরে নিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়তেই দেখলেন, বেঁচে রয়েছেন তিনজনই। গায়ে একটুও আঁচড়ও লাগেনি!
শনিবার এই ‘মিরাকেলে’র সাক্ষী রইল বিহারের বার রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীরা। শনিবার বিকেলে ওই স্টেশন থেকে দিল্লিগামী বিক্রমশীলা এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠার কথা ছিল ওই মহিলার। সঙ্গে স্বামী-সন্তান সহ গোটা পরিবার ছিল। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। সামনে থাকায় ওই মহিলার স্বামী ট্রেনে উঠতে পারলেও, তিনি পারেননি। ভিড়ের ঠেলায় পা হড়কে পড়ে যান রেল লাইনে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ে যায় তাঁর দুই সন্তানও।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই মহিলাকে রেললাইনে পড়ে যেতে দেখেই চিৎকার শুরু করেন। এদিকে, ততক্ষণে এগোতে শুরু করেছে ট্রেন। যাত্রীরা ধরেই নিয়েছিলেন যে সন্তানদের নিয়ে ট্রেনে কাটা পড়বেন ওই মহিলা, কিন্তু ট্রেন বেরিয়ে যেতেই তাঁরা হতবাক। দেখলেন, দুই সন্তানকে বুকে আঁকড়ে তাদের উপরে ঢাল হয়ে শুয়ে আছেন ওই মহিলা।
ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়তেই কয়েকজন যাত্রী রেললাইনে ঝাঁপ দেন এবং ওই মহিলা ও তাঁর দুই সন্তানকে উদ্ধার করেন। অন্যদিকে, ওই মহিলার স্বামীও চলন্ত ট্রেন থেকেই ঝাঁপ দেন এবং দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছন। পরে রেল কর্তৃপক্ষের তরফে ওই মহিলা ও তাঁর দুই সন্তানকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চেক-আপের জন্য। তারা স্থিতিশীল রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। শরীরে বিশেষ কোনও আঘাতও লাগেনি।
স্টেশন মাস্টার জানান, মহিলার বুদ্ধিমত্তার জোরেই তিনজনের প্রাণ বেঁচে গিয়েছে। ট্রেনের ফাঁক দিয়ে রেললাইনে পরে যাওয়ার পরই তিনি ট্রাকের পাশে সরে আসেন এবং দুই সন্তানকে ঢাল করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়েন। ফলে উপর দিয়ে ট্রেন চলে গেলেও, তাদের কোনও চোট লাগেনি।