নয়া দিল্লি: সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায়, নয়াদিল্লিতে সংসদের অ্যানেক্স হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হল। মন্ত্রিসভার বৈঠকের অ্য়াজেন্ডা প্রকাশ করা হয়নি। তবে সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যে বিলগুলি পেশ করা হবে, সেগুলির বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের মধ্যে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে উত্তাপ বেড়েছে নয়া দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ অধিবেশনের ঘোষণার পর থেকেই, বিরোধী দলগুলি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও বড় পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। এদিনের বৈঠকে সেই জল্পনা আরও বেড়েছে।
মহিলা সংরক্ষণ বিলে, লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায়, মোট আসনের ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে আবার তফশিলি জাতি, উপজাতি এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্যও সংরক্ষণের প্রস্তাব রয়েছে। বিলে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনের পর সংরক্ষিত আসনগুলি পরিবর্তন করা উচিত। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিন বেশ কয়েকটি দল সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের জন্য চাপ দিয়েছিল। সূত্র মতে, ২০ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করা হবে।
এর আগে, সংসদের পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশনের প্রথম দিন, লোকসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের দুই কক্ষের ইতিহাস ও বিভিন্ন তাৎপর্যের কতা তুলে ধরেন তিনি। আবেগঘন ভাষণে, প্রধানমন্ত্রী মোদী পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীদের স্মরণ করেন। লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে, ২০১৪ সালে তাঁর প্রথমবার সংসদে প্রবেশ করার মুহূর্তের কথাও বলেন তিনি। তবে, সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বেরও কথাও প্রধানমন্ত্রী মোদীর এদিনের বক্তৃতায় উঠে এসেছে। তবে, একই সঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা সরকারের জারি করা জরুরি অবস্থার কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে তাঁর বক্তৃতায়। নেহেরুর বিখ্যাত ‘অ্যাট দ্য স্ট্রোক অব মিডনাইট’ বক্তৃতার প্রশংসা করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
সংসদের বিশেষ অধিবেশন ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধী দল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং সর্বোপরি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছিল, এই অধিবেশনে সরকার সম্ভবত অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বা ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের মতো বড় কোনও সিদ্ধান্ত জানাবে। জি২০ নৈশভোজে রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্রকে কেন্দ্র করে দেশের নাম পরিবর্তনের হাওয়াও ওঠে। দেশের নাম হিসেবে ইন্ডিয়া শব্দটি বাদ দেওয়ার জন্য সরকার কোনও রেজোলিউশন আনতে পারে বলে জলপনা তৈরি হয়। তবে, ইতিমধ্যেই সংসদের বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি প্রকাশ করেছে সরকার। বিশেষ অধিবেশনে আলোচনার জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি সরকার তালিকাভুক্ত করেছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্তির বিষয়ে এক বিতর্কিত বিল। এছাড়া, ‘অ্যাডভোকেটস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০২৩’ এবং ‘দ্য প্রেস অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অফ পিরিওডিকালস বিল, ২০২৩’। তবে, সরকার চাইলে এই তালিকায় আরও কিছু বিল যুক্ত করতে পারে। অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হতে পারে।