নয়া দিল্লি: এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সম্প্রতি যুদ্ধ শুরু হয়েছে পশ্চিম এশিয়াতেও। যুদ্ধে কার জয় হবে, তা অনেক পরের কথা। কিন্তু, যুদ্ধের বলি হচ্ছেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে বিজয়া দশমীর দিন, নয়া দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরের প্রাঙ্গণে হল একটি জমকালো বিশ্বশান্তি যজ্ঞ। প্রায় ১৪০০ ভক্ত এই পবিত্র আচারে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। গোটা বিশ্বে যাতে অপার শান্তি বিরাজ করে, তার জন্য প্রার্থনা করেন তাঁরা। ২০০৫ সালে স্বামী মহারাজ দিল্লির এই স্বামীনারায়ণ অক্ষরধাম মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন। তারপর থেকে ধর্ম ও সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে গোটা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে এই মন্দির। আধ্যাত্মিক দিক ছাড়াও, অপূর্ব স্থাপত্য, খোদাই করা ভাস্কর্য, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভারতীয় সংস্কৃতির চমৎকার উপস্থাপনার জন্য খ্যাতি বাভ করেছে।
এদিন ভোর ৫টাতেই যজ্ঞস্থলে জড়ো হন বিশ্বশান্তি মহাযজ্ঞের সকল অংশগ্রহণকারীরা। সামনের সারিতে ছিলেন সাধুরা। সব মিলিয়ে ১১১ যজ্ঞকুণ্ডে এই বিশ্বশান্তি যজ্ঞ করা হয়। ১৪০০ ভক্ত স্বস্তিকার আকারে দাঁড়িয়ে এই পবিত্র আচারে অংশ নেন। সবকটি বেদীর সামনে যজ্ঞের আনুষ্ঠানিক নৈবেদ্য প্রদান করা হয়। ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব এবং গণেশকে আহ্বান করা হয়। পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। ‘সৎসঙ্গ দীক্ষা’ শাস্ত্রের ৩১৫টি শ্লোক উচ্চারণের মধ্য দিয়ে যজ্ঞে অর্ঘ দেওয়া হয়। ভারতের “বসুধৈব কুটুম্বকম” দর্শনের ধারণা মূর্ত হয়ে ওঠে এই মহাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে। সারা বিশ্বে অনন্ত শান্তির প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই মহাযজ্ঞ।
মহাযজ্ঞের পর, সংগঠনের এক বিশিষ্ট সাধু, ভক্তবৎসল স্বামী বলেন, “উপনিষদ অনুসারে, যজ্ঞ হল ভক্তির এক বিশেষ অনুষ্ঠান। এটা উৎসর্গের প্রতীক। এই আচারের সময় পবিত্র অগ্নিকে আহ্বান করা হয় এবং বিভিন্ন নৈবেদ্য তৈরি করা হয়। আমরা যা পেয়েছি, তা পরম সত্তাকে নিবেদন করা হয়। পরব্রহ্ম হলেন সকল দেবতার উপরে, পরম ক্ষমতার দাতা। অতএব, যখন দেবতাদের নৈবেদ্য প্রদান করা হয়, শেষ পর্যন্ত এটি দেবতাদের মাধ্যমে পরম সত্তারই পূজা করা। শাস্ত্র অনুসারে, যজ্ঞ এবং মহাযজ্ঞ মূলত একই আচার। সামান্য পার্থক্য আছে। যজ্ঞ ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, অন্যদিকে মহাযজ্ঞ হল সম্প্রদায়ের। অন্য কথায়, যজ্ঞ হল ব্যক্তিগত লাভের বিষয়। আর মহাযজ্ঞ বিশ্ব এবং আপন আত্মার কল্যাণের উদ্দেশ্যে করা হয়।”