স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার হয়ে গিয়েছে, এখনও আমাদের সমাজব্যবস্থায় রয়েছে শ্রেণি-লিঙ্গ-জাতের বিভেদ। আর সেই কারণেই বর্তমান সংরক্ষণও (Reservation)। পিছিয়ে পড়া শ্রেণি, বর্ণ বা গোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতেই আনা হয়েছিল সংরক্ষণ ব্যবস্থা। ভারতের সংরক্ষণের ইতিহাসে ২০২২ সালটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই বছরই সংরক্ষণ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত (Supreme Court of India)। চলতি বছরেই যেখানে দেশের সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করেছিল শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে আর কত প্রজন্ম ধরে সংরক্ষণ চলবে, সেখানেই আর্থিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য শিক্ষাক্ষেত্র ও সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের (10 Percent Reservation for Economical Weaker Section) পক্ষেই রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর দেশের শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলেই রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালার ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সাংবিধানিক বেঞ্চ ৩:২ অনুপাতে এই রায় দেন।
আর্থিকভাবে দুর্বল বা অনগ্রসরদের শিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে সুবিধা দিতেই মোদী সরকার ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব আনে। ২০১৯ সালে সংসদে বিল পাশ করে তা আইনেও পরিণত করা হয়। কিন্তু সেই বছরই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। অভিযোগ ওঠে, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থায় সংবিধানের সাম্যের নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে নির্ধারিত সংরক্ষণের মাত্রা ৫০ শতাংশ স্থির করে দেওয়া হয়েছিল, তাও পার করছে এই ১০ শতাংশ সংরক্ষণ। তবে কংগ্রেস সহ অন্য়ান্য বিরোধী দলগুলির কেউই এই সংরক্ষণের বিরোধিতা করেনি। সেপ্টেম্বর মাসে শেষ শুনানির পর এই মামলায় রায় সংরক্ষিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত।
৭ নভেম্বর এই মামলার রায়দানে আর্থিকভাবে দুর্বলদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণকে বৈধ বলেই ঘোষণা করা হয়। শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, বৈষম্যমূলক হওয়ার কারণ দেখিয়ে সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনীকে বাদ দেওয়া যায় না। সংরক্ষণই শেষ কথা নয়। এটি একটি পথমাত্রা।
রায়দানে বিচারপতি দীনেশ মহেশ্বরী জানান,এই রায়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হল আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ১০৩তম সংবিধান সংশোধনী মূল সংরক্ষণ পরিকাঠামোর পরিপন্থী। দুই, আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষণ থেকে বঞ্চিত গরিব তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ পরিপন্থী এই আইন। তিন, ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়টিও লঙ্ঘিত করছে এই আইন।এই তিনটি বিষয় কোনওভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে না ১০৩তম সংবিধান সংশোধনীতে। একই মত পোষণ করেন বিচারপতি বেলা ত্রিবেদী ও বিচারপতি জেবি পর্দিওয়ালা। অন্যদিকে, প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এবং বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভট তাঁদের রায়ে জানান, আর্থিকভাবে অনগ্রসরদের সংরক্ষিত বিষয়টি সংবিধান লঙ্ঘিত না করলেও,এই সংরক্ষণ থেকে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গরিব সম্প্রদায়দের অন্তর্ভুক্তি না হওয়ায় বৈষম্য তৈরি করে।