কলকাতা: বাম ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানে পুলিশি ‘নির্মমতা’র অভিযোগে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বনধ শেষ হল। বনধ শেষে সাংবাদিক বৈঠক করে একে সফল বলে দাবি করলেন সীতারাম ইয়েচুরি ও মহম্মদ সেলিম। বনধ চলাকালীনই এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে জানানো হয় পুলিশের বৃহস্পতিবারের ভূমিকা নিয়ে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করবে তারা। একইসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনেরও দ্বারস্থ হবে। অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিমও জানান, বৃহস্পতিবার যতটা রক্ত ঝরেছে তার হিসাব নেওয়া হবে, আইনি পথে হাঁটা হবে।
১২ ঘণ্টার হরতাল মোটের ওপর সফল হয়েছে বলেই দাবি বামেদের। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মহম্মদ সেলিম ও সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সেখান থেকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিয়ে বললেন, “পরিবর্তনের নয় এবারের নির্বাচনী লড়াই হতে চলেছে মানুষের অধিকারের লড়াই।”
লালবাজার সূত্রে খবর, বামেদের ডাকা বনধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু ধরপাকড় চালাতে হয়েছে পুলিশকে। মোট ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে ৮৬ জন পুরুষ ও চারজন মহিলা।
বৃহস্পতিবারের লাঠির পাল্টা আজকের ক্যারম, ক্রিকেট, ফুটবল। কাঁদানে গ্যাসের পাল্টা আজ চকোলেট, ফুল। নবান্ন অভিযানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বনধে গান্ধীগিরিতেই জবাব বামেদের। ক্যানিং মহকুমা শহরে রাস্তা জুড়ে ক্যারম খেললেন অবরোধকারীরা। খেলা হল ক্রিকেটও। অবরোধ করে ক্রিকেট খেলেছেন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ বনধ সমর্থকেরা। পথ আটকে জমিয়ে ফুটবল ম্যাচ চলে হাওড়ার ডোমজুড়ে ও উত্তরপাড়ার ধাড়সায়। যাদবপুরেও রাস্তা আটকে ক্যারম কিংবা ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে বনধ সমর্থকদের।
ভোটের বাজারে এখন ট্রেন্ডিং তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান। এবার সেই স্লোগানই ধার করলেন শিলিগুড়ির বাম নেতা কর্মীরা। শুক্রবার তাঁদের ১২ ঘণ্টার বনধ সফল করতে শরণ নিলেন ‘কেষ্টদার’ কপি রাইট এই শব্দবন্ধের।
পড়ুন বিস্তারিত: ‘দাদা দোকানটা বন্ধ করুন, না হলে খেলা হবে কিন্তু’
বৃহস্পতিবার যতটা রক্ত ঝরেছে তার হিসাব নেওয়া হবে, আইনি পথে হাঁটা হবে। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন মহম্মদ সেলিম। তাঁর অভিযোগ, “অশিক্ষিত সরকারের হাতে পড়ে আইপিএসরাও অশিক্ষিত হন। কীভাবে বিক্ষোভ সামলাতে হয় তাও বোঝে না। অসৎ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ অসৎ হয়েছে। শুক্রবারও পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে।”
সিপিএমের এখন আর সেই সংগঠন নেই। রাতারাতি বনধ (Bengal Strike) ডাকলেই লোকে তা মানবে না। শুক্রবার বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধ নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের।
পড়ুন বিস্তারিত: Bengal Strike: ‘সিপিএমের সেদিন আর নেই, রাতারাতি বনধ ডাকলে মানুষ মেনে নেবে কেন’
বুথে বুথে নবান্ন হবে। বুথে বুথে ব্যারিকেড হবে। শুক্রবার এসএফআই ও ডিওয়াইএফআইয়ের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে দেওয়া হল সে হুঁশিয়ারিই। ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, বৃহস্পতিবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে তাঁরা। আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা হবে। একইসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই দুই বাম যুব ছাত্র সংগঠন। মীনাক্ষী বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারির বদলা নেওয়া হবে বুথে বুথে।
ছাত্র যুব কংগ্রেসের মিছিলে ধুন্ধুমার। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ফের উত্তপ্ত ধর্মতলা চত্বর। বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ সমর্থন করে এদিন ভিক্টোরিয়া হাউজ থেকে মিছিল বের করে কংগ্রেস যুব ছাত্র পরিষদ। সেই মিছিল টিপু সুলতান মসজিদের কাছে আসতেই মিছিলকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এরপরই পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। বেশ কয়েকজনকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। টেনে হিঁচড়ে বনধ সমর্থকদের বাসেও তোলা হয়। অভিযোগ, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ ও যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাদাব খান-সহ ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সকাল থেকেই নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট বন্ধ। গাড়ির সংখ্যাও রাস্তায় কম। এদিন শান্তিপুরে বনধ সমর্থনকারীরা রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে। এর জেরে বন্ধ হয়ে যায় আপ ও ডাউনে ট্রেন চলাচল।
বামেদের ১২ ঘণ্টার বনধ। সেই বনধকে সমর্থন করতে রাস্তার উপর বসে চলল বনধ সমর্থনকারীদের কাটাকুটি খেলা। সঙ্গে উঠল স্লোগান, ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই। লড়াই করেই বাঁচতে চাই।’ শুক্রবার অশোকনগর বিল্ডিং মোড়ে দেখা গেল সেই ছবি।
পড়ুন বিস্তারিত: রাস্তা আটকে চলল কাটাকুটি খেলা, সারি বেধে গাড়ি দাঁড়িয়ে যশোর রোডে
এন্টালি থেকে যে মিছিল শুরু হয়েছে তা শিয়ালদহ পার হতেই বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি এমজি রোড ধরে মিছিল এগোনোর সময় জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। যদিও এ নিয়ে সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “আমরা সকলকে সংযত থাকতেই বলেছি। দু’ একজন এই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। এটা কাঙ্খিত নয়।” অন্যদিকে সূর্যকান্ত মিশ্রর বক্তব্য, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
এন্টালি মার্কেট থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাচ্ছেন বাম-কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব। রয়েছেন বিমান বসু,সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, অশোক ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তী, আনাদি সাহু, সুজন চক্রবর্তীরা। বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, শুক্রবারের বনধে ভাল সাড়া মিলেছে। এ ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না বলে দাবি নেতৃত্বের।
কোথাও রেল অবরোধ, কোথাও আবার আটকানো হয়েছে বাস, অটো। সকাল থেকে জেলায় জেলায় এই ছবি। উদ্বেগে-আশঙ্কায় কোথায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁরা। আবার কোথায় কিনারা খুঁজে না পেয়ে কেঁদে ভাসালেন। হুগলির পাণ্ডুয়া স্টেশনে আপ ও ডাউন লাইনে রেল অবরোধ চলে। তার জেরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন বহু পরীক্ষার্থী। এরপরই এক পরীক্ষার্থী হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন।
পড়ুন বিস্তারিত: ‘দাদা আজ আমার পরীক্ষা, অবরোধ তুলে নিন’, বলেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন পরীক্ষার্থী
সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় গোলাপ দিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেল বনধ সমর্থনকারীদের। চিড়িয়া মোড়ে এদিন ধর্মঘটীদের রুখতে এলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় লাল গোলাপ। মেদিনীপুরের ঘাটালেও একই ছবি। ঘাটালের দাসপুরে ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ও দাসপুর থানার পুলিশকে গোলাপ দিয়ে সংবর্ধনা জানান আন্দোলনকারীরা। কোচবিহারের কাছারি মোড়ে আবার বনধ সমর্থনকারীরা পুলিশকে মিষ্টিমুখ করান।
বন্ধের মিশ্র প্রভাব সিঙ্গুরে। বন্ধের সমর্থনে সকাল থেকেই সিঙ্গুরে মিছিল করে বামেরা। এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাটই বন্ধ।
শিলিগুড়িতে বন্ধের সমর্থনে বাম কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে প্রবল উত্তেজনা এলাকায় নামানো হল র্যাফ। চলল জল কামান। এদিন বনধের সমর্থনে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে একটি মিছিল বের করে বামেরা। একইসঙ্গে একটি বাইক মিছিল বের করে কংগ্রেস। যা ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে অবরোধ করলেন বনধ সমর্থকরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তাঁরা। যান চলাচল ব্যহত ২ নম্বর জাতীয় সড়কেও।
বাইকে অফিস যাওয়ার পথে এক ব্যাঙ্ক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। জোর করে অটো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে অটো ভাঙচুরেরও অভিযোগে উত্তপ্ত নোয়াপাড়া। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ।
বর্ধমান শহরের পাশাপাশি জেলার রায়নাতেও বাম কর্মী সমর্থকরা সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছে। বর্ধমান আরামবাগ রোডের মিরেপোতা বাজারে বাম কর্মীরা রাস্তায় বেঞ্চ ফেলে অবরোধ করেন। অবরোধকারীদের হঠাতে পুলিশের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীও নামে বলে অভিযোগ। বর্ধমানের কার্জনগেটে জি টি রোড অবরোধ করে ধর্মঘটীরা। পুলিশকে গোলাপ দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কি হয়। অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে এখনও পর্যন্ত বামেদের ডাকা বনধের তেমন প্রভাব নেই। সরকারি ও বেসরকারি বাস চলছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা কম।
হুগলির পাণ্ডুয়া রেল স্টেশনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল সিপিআইএম কর্মীরা। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে চলে অবরোধ।
এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেটে সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথভাবে অবরোধ করে। লেকটাউন, কালিন্দী, যশোর রোডে অবরোধ সিপিএমের। মিছিল করে তারা রাস্তা অবরোধ করে। নিউটাউন পাথরঘাটা বাজার এলাকায় বন্ধ সফল করতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিআইএম কর্মীরা। ঘটনাস্থলে টেকনো সিটি থানার পুলিশ। বিক্ষোভ তোলাকে ঘিরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বচসা শুরু হয়। বাগুইআটি ভিআইপি রোডও অবরোধ করেন সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা
সকাল থেকেই জায়গায় জায়গায় রেল অবরোধের খবর আসছে। কাঁচড়াপাড়ায় ট্রেন অবোরোধ করলেন বনধ সমর্থনকারীরা। এর জেরে শিয়ালদহ মেন শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যহত। দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা। অন্যদিকে শিয়ালদহ ডায়মন্ড হারবার শাখায় ট্রেন অবরোধ করা হয়। হোটর স্টেশনে রেল অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা। শিয়ালদহ শাখার অশোকনগরেও ট্রেন অবরোধ করে ধর্মঘটীরা। দমদম ক্যানটনমেন্টেও ট্রেন আটকানো হয়।
বনধে মিশ্র প্রভাব মুর্শিদাবাদে। বহরমপুরে সরকারি বাসের পাশাপাশি রাস্তায় নেমেছে বেসরকারি বাসও। তবে কান্দিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বনধ সমর্থনকারীরা।
বামেদের ডাকা ধর্মঘটে সারা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। ঘাটাল পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম। অনেক দোকানপাট বন্ধ। গন্তব্যস্থলের পথে বেরিয়ে বাস না পেয়ে সমস্যায় বাস যাত্রীরা। সকাল থেকে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বাস ও সরকারি বাস ছাড়া রাস্তায় সেই ধরনের কোনও গাড়ি নেই।
কলকাতা: বাম ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানে পুলিশি ‘নির্মমতা’র অভিযোগে শুক্রবার ১২ ঘণ্টার বনধ শেষ হল। বনধ শেষে সাংবাদিক বৈঠক করে একে সফল বলে দাবি করলেন সীতারাম ইয়েচুরি ও মহম্মদ সেলিম। বনধ চলাকালীনই এসএফআই, ডিওয়াইএফআইয়ের তরফে জানানো হয় পুলিশের বৃহস্পতিবারের ভূমিকা নিয়ে আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করবে তারা। একইসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনেরও দ্বারস্থ হবে। অন্যদিকে সিপিআইএম নেতা মহম্মদ সেলিমও জানান, বৃহস্পতিবার যতটা রক্ত ঝরেছে তার হিসাব নেওয়া হবে, আইনি পথে হাঁটা হবে।
১২ ঘণ্টার হরতাল মোটের ওপর সফল হয়েছে বলেই দাবি বামেদের। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মহম্মদ সেলিম ও সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সেখান থেকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিয়ে বললেন, “পরিবর্তনের নয় এবারের নির্বাচনী লড়াই হতে চলেছে মানুষের অধিকারের লড়াই।”
লালবাজার সূত্রে খবর, বামেদের ডাকা বনধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু ধরপাকড় চালাতে হয়েছে পুলিশকে। মোট ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে যার মধ্যে ৮৬ জন পুরুষ ও চারজন মহিলা।
বৃহস্পতিবারের লাঠির পাল্টা আজকের ক্যারম, ক্রিকেট, ফুটবল। কাঁদানে গ্যাসের পাল্টা আজ চকোলেট, ফুল। নবান্ন অভিযানে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বনধে গান্ধীগিরিতেই জবাব বামেদের। ক্যানিং মহকুমা শহরে রাস্তা জুড়ে ক্যারম খেললেন অবরোধকারীরা। খেলা হল ক্রিকেটও। অবরোধ করে ক্রিকেট খেলেছেন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ বনধ সমর্থকেরা। পথ আটকে জমিয়ে ফুটবল ম্যাচ চলে হাওড়ার ডোমজুড়ে ও উত্তরপাড়ার ধাড়সায়। যাদবপুরেও রাস্তা আটকে ক্যারম কিংবা ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছে বনধ সমর্থকদের।
ভোটের বাজারে এখন ট্রেন্ডিং তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান। এবার সেই স্লোগানই ধার করলেন শিলিগুড়ির বাম নেতা কর্মীরা। শুক্রবার তাঁদের ১২ ঘণ্টার বনধ সফল করতে শরণ নিলেন ‘কেষ্টদার’ কপি রাইট এই শব্দবন্ধের।
পড়ুন বিস্তারিত: ‘দাদা দোকানটা বন্ধ করুন, না হলে খেলা হবে কিন্তু’
বৃহস্পতিবার যতটা রক্ত ঝরেছে তার হিসাব নেওয়া হবে, আইনি পথে হাঁটা হবে। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে জানালেন মহম্মদ সেলিম। তাঁর অভিযোগ, “অশিক্ষিত সরকারের হাতে পড়ে আইপিএসরাও অশিক্ষিত হন। কীভাবে বিক্ষোভ সামলাতে হয় তাও বোঝে না। অসৎ সরকারের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ অসৎ হয়েছে। শুক্রবারও পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে।”
সিপিএমের এখন আর সেই সংগঠন নেই। রাতারাতি বনধ (Bengal Strike) ডাকলেই লোকে তা মানবে না। শুক্রবার বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধ নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের।
পড়ুন বিস্তারিত: Bengal Strike: ‘সিপিএমের সেদিন আর নেই, রাতারাতি বনধ ডাকলে মানুষ মেনে নেবে কেন’
বুথে বুথে নবান্ন হবে। বুথে বুথে ব্যারিকেড হবে। শুক্রবার এসএফআই ও ডিওয়াইএফআইয়ের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে দেওয়া হল সে হুঁশিয়ারিই। ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, বৃহস্পতিবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে তাঁরা। আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা হবে। একইসঙ্গে মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই দুই বাম যুব ছাত্র সংগঠন। মীনাক্ষী বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারির বদলা নেওয়া হবে বুথে বুথে।
ছাত্র যুব কংগ্রেসের মিছিলে ধুন্ধুমার। বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার ফের উত্তপ্ত ধর্মতলা চত্বর। বামেদের ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধ সমর্থন করে এদিন ভিক্টোরিয়া হাউজ থেকে মিছিল বের করে কংগ্রেস যুব ছাত্র পরিষদ। সেই মিছিল টিপু সুলতান মসজিদের কাছে আসতেই মিছিলকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এরপরই পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করতে গেলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। বেশ কয়েকজনকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। টেনে হিঁচড়ে বনধ সমর্থকদের বাসেও তোলা হয়। অভিযোগ, ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ ও যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাদাব খান-সহ ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেস কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতার করে হেয়ার স্ট্রিট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সকাল থেকেই নদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট বন্ধ। গাড়ির সংখ্যাও রাস্তায় কম। এদিন শান্তিপুরে বনধ সমর্থনকারীরা রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে পড়ে। এর জেরে বন্ধ হয়ে যায় আপ ও ডাউনে ট্রেন চলাচল।
বামেদের ১২ ঘণ্টার বনধ। সেই বনধকে সমর্থন করতে রাস্তার উপর বসে চলল বনধ সমর্থনকারীদের কাটাকুটি খেলা। সঙ্গে উঠল স্লোগান, ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই। লড়াই করেই বাঁচতে চাই।’ শুক্রবার অশোকনগর বিল্ডিং মোড়ে দেখা গেল সেই ছবি।
পড়ুন বিস্তারিত: রাস্তা আটকে চলল কাটাকুটি খেলা, সারি বেধে গাড়ি দাঁড়িয়ে যশোর রোডে
এন্টালি থেকে যে মিছিল শুরু হয়েছে তা শিয়ালদহ পার হতেই বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে গাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি এমজি রোড ধরে মিছিল এগোনোর সময় জোর করে দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। যদিও এ নিয়ে সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “আমরা সকলকে সংযত থাকতেই বলেছি। দু’ একজন এই ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে। এটা কাঙ্খিত নয়।” অন্যদিকে সূর্যকান্ত মিশ্রর বক্তব্য, “কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
এন্টালি মার্কেট থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলাচ্ছেন বাম-কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব। রয়েছেন বিমান বসু,সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, অশোক ঘোষ, অমিতাভ চক্রবর্তী, আনাদি সাহু, সুজন চক্রবর্তীরা। বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, শুক্রবারের বনধে ভাল সাড়া মিলেছে। এ ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না বলে দাবি নেতৃত্বের।
কোথাও রেল অবরোধ, কোথাও আবার আটকানো হয়েছে বাস, অটো। সকাল থেকে জেলায় জেলায় এই ছবি। উদ্বেগে-আশঙ্কায় কোথায় ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তাঁরা। আবার কোথায় কিনারা খুঁজে না পেয়ে কেঁদে ভাসালেন। হুগলির পাণ্ডুয়া স্টেশনে আপ ও ডাউন লাইনে রেল অবরোধ চলে। তার জেরে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন বহু পরীক্ষার্থী। এরপরই এক পরীক্ষার্থী হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন।
পড়ুন বিস্তারিত: ‘দাদা আজ আমার পরীক্ষা, অবরোধ তুলে নিন’, বলেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন পরীক্ষার্থী
সকাল থেকেই বিভিন্ন জায়গায় গোলাপ দিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেল বনধ সমর্থনকারীদের। চিড়িয়া মোড়ে এদিন ধর্মঘটীদের রুখতে এলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় লাল গোলাপ। মেদিনীপুরের ঘাটালেও একই ছবি। ঘাটালের দাসপুরে ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক ও দাসপুর থানার পুলিশকে গোলাপ দিয়ে সংবর্ধনা জানান আন্দোলনকারীরা। কোচবিহারের কাছারি মোড়ে আবার বনধ সমর্থনকারীরা পুলিশকে মিষ্টিমুখ করান।
বন্ধের মিশ্র প্রভাব সিঙ্গুরে। বন্ধের সমর্থনে সকাল থেকেই সিঙ্গুরে মিছিল করে বামেরা। এলাকার বেশির ভাগ দোকানপাটই বন্ধ।
শিলিগুড়িতে বন্ধের সমর্থনে বাম কংগ্রেসের মিছিল ঘিরে প্রবল উত্তেজনা এলাকায় নামানো হল র্যাফ। চলল জল কামান। এদিন বনধের সমর্থনে শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে একটি মিছিল বের করে বামেরা। একইসঙ্গে একটি বাইক মিছিল বের করে কংগ্রেস। যা ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়।
ডানকুনিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে অবরোধ করলেন বনধ সমর্থকরা। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তাঁরা। যান চলাচল ব্যহত ২ নম্বর জাতীয় সড়কেও।
বাইকে অফিস যাওয়ার পথে এক ব্যাঙ্ক কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠল বনধ সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে। জোর করে অটো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে অটো ভাঙচুরেরও অভিযোগে উত্তপ্ত নোয়াপাড়া। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ।
বর্ধমান শহরের পাশাপাশি জেলার রায়নাতেও বাম কর্মী সমর্থকরা সকাল থেকেই রাস্তায় নেমেছে। বর্ধমান আরামবাগ রোডের মিরেপোতা বাজারে বাম কর্মীরা রাস্তায় বেঞ্চ ফেলে অবরোধ করেন। অবরোধকারীদের হঠাতে পুলিশের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীও নামে বলে অভিযোগ। বর্ধমানের কার্জনগেটে জি টি রোড অবরোধ করে ধর্মঘটীরা। পুলিশকে গোলাপ দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কি হয়। অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে এখনও পর্যন্ত বামেদের ডাকা বনধের তেমন প্রভাব নেই। সরকারি ও বেসরকারি বাস চলছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা কম।
হুগলির পাণ্ডুয়া রেল স্টেশনে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল সিপিআইএম কর্মীরা। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে চলে অবরোধ।
এয়ারপোর্ট ১ নম্বর গেটে সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথভাবে অবরোধ করে। লেকটাউন, কালিন্দী, যশোর রোডে অবরোধ সিপিএমের। মিছিল করে তারা রাস্তা অবরোধ করে। নিউটাউন পাথরঘাটা বাজার এলাকায় বন্ধ সফল করতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান সিপিআইএম কর্মীরা। ঘটনাস্থলে টেকনো সিটি থানার পুলিশ। বিক্ষোভ তোলাকে ঘিরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বচসা শুরু হয়। বাগুইআটি ভিআইপি রোডও অবরোধ করেন সিপিআইএম কর্মী সমর্থকরা
সকাল থেকেই জায়গায় জায়গায় রেল অবরোধের খবর আসছে। কাঁচড়াপাড়ায় ট্রেন অবোরোধ করলেন বনধ সমর্থনকারীরা। এর জেরে শিয়ালদহ মেন শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যহত। দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা। অন্যদিকে শিয়ালদহ ডায়মন্ড হারবার শাখায় ট্রেন অবরোধ করা হয়। হোটর স্টেশনে রেল অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা। শিয়ালদহ শাখার অশোকনগরেও ট্রেন অবরোধ করে ধর্মঘটীরা। দমদম ক্যানটনমেন্টেও ট্রেন আটকানো হয়।
বনধে মিশ্র প্রভাব মুর্শিদাবাদে। বহরমপুরে সরকারি বাসের পাশাপাশি রাস্তায় নেমেছে বেসরকারি বাসও। তবে কান্দিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান বনধ সমর্থনকারীরা।
বামেদের ডাকা ধর্মঘটে সারা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে। ঘাটাল পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম। অনেক দোকানপাট বন্ধ। গন্তব্যস্থলের পথে বেরিয়ে বাস না পেয়ে সমস্যায় বাস যাত্রীরা। সকাল থেকে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি বাস ও সরকারি বাস ছাড়া রাস্তায় সেই ধরনের কোনও গাড়ি নেই।