কলকাতা ও মেদিনীপুর: কিশোর- কিশোরী হোক বা নাবালক, প্রত্যেকের হাতেই এখন মোবাইল। মুঠো ফোনে এক অন্য জগৎ খুঁজে নিয়েছে তারা। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের বেড়াজাল যখন বাইরে খেলাধূলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন নেট দুনিয়াই ভরসা। আর ইন্টারনেটের দুনিয়ায় পরতে পরতে বিনোদনের হাতছানি। সেই আকর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন। এমনকি সেই নেশার কাছে তুচ্ছ হয়ে পড়েছে জীবন। পরপর দুটি ঘটনা সেই কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কলকাতায় ও পশ্চিম মেদিনীপুরে একই রকম ঘটনা। মোবাইল ব্যবহার করতে অভিভাবকরা বাধা দিয়েছিলেন। তাই হতাশায় মৃত্যুর পথ পেছে নিয়েছে দুই কিশোরী। দু জনেরই বয়স ১৮-র আশেপাশে।
প্রথম ঘটনা কলকাতার পর্ণশ্রী এলাকায়। আত্মঘাতী কিশোরীর নাম দীপ্তি পাইক, বয়স ১৭। পর্ণশ্রী সারদা বিদ্যাপীঠ স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী গলায় গামছা জড়িয়ে সিলিং ফ্যানের ঝুলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে মোবাইলের নেশা। তার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকদিন অনেক রাত পর্যন্ত সে মোবাইল দেখত। এটা নিয়েই তার বাবা মা তাকে প্রত্যেক দিন বকাবকি করত। গতকাল দুপুর তিনটের সময় তার মা যখন বাড়িতে ফেরেন তখন তিনি মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তারপর চিৎকার-চেঁচামেচি করলে প্রতিবেশীরা এসে দীপ্তিকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
দীপ্তির বাবা জানিয়েছেন, তিনি, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর মেয়ে একই ঘরে, একই বিছানায় শুতেন। রাত অবধি মেয়ের হাতে মোবাইল দেখে কেড়ে নেন তিনি। পরে সকালে আবার মোবাইল মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়ে কাজে চলে যান। তারপরই মেয়ের মৃত্যুর খবর আসে। ঘটনার তদন্ত করছে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ।
অন্যদিকে, একই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গড়বেতা থানার ধোবাবেড়িয়া গ্রামে। উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী বর্ণালী পালের বয়স ১৮। মোবাইল ফোন নিয়ে সময় কাটানোয় বাবা মায়ের বকা বকি চলত। আজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হয় সে।
বর্ণালী পাল গড়বেতা হাইস্কুলের ছাত্রী। মোবাইল ফোন নিয়ে সারাক্ষণ সময় কাটানোর জেরেই বাবা-মায়ের সঙ্গে তর্কাতর্কি চলত তার। গতকাল বাবা-মায়ের কাছে বকুনি খায় সে, পরবর্তী সময় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর চন্দ্রকোনা রোড থেকে পুলিশ আধিকারিকরা ওই মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয়। শনিবার সকালে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয় বর্ণালী। বলে পরিবারের দাবি। ঘটনার পর মেয়েটিকে উদ্ধার করে গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে গড়বেতা থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে তাঁর দেহ। পুরো ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে ।
আরও পড়ুন: চাইল্ড সেন্টারের আড়ালে শিশু বিক্রি! কাঠগড়ায় তৃণমূলের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রের পুত্রবধূ