কলকাতা: চিকিৎসকদের সঙ্গে ‘সমন্বয়’ বৈঠকে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার আমতলায় আয়োজিত হয়েছে এই বৈঠক। পোশাকি নাম ‘ডক্টর্স সামিট ২০২৪’। আরজি কর কাণ্ডের পর চিকিৎসকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে ‘দূরত্ব’ তৈরি হয়েছিল, তা মেটাতেই এই বৈঠক। চিকিৎসকদের আন্দোলনের পর এই প্রথম হাজারও চিকিৎসকের মুখোমুখি অভিষেক।
রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের একাধিক বিষয় নিয়ে সমন্বয় সভা থেকে কথা বলবেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। আমন্ত্রিত চিকিৎসকদের জন্য থাকছে পৃথক প্রবেশপত্র। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে শনিবার আমতলার উদ্দেশে রওনা হবে বাস। হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন থেকেও বাস ছাড়বে আমতলার উদ্দেশে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মডার্ন মেডিসিন, আয়ুষ মিলিয়ে হাজার চিকিৎসকের সভায় যোগদানের সম্ভাবনা।
নতুন বছর থেকে ডায়মন্ড হারবারের সাত বিধানসভায় চিকিৎসা শিবিরের আয়োজন করা হবে। প্রতিটি বিধানসভায় ১০ দিন ধরে স্বাস্থ্য শিবিরের ভাবনা। এক-এক দিন বিধানসভা ভিত্তিক অন্তত ৪০টি শিবির করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। দশ দিনের মধ্যে সাতদিন শিবির পরিচালনায় জেনারেল মেডিসিনের চিকিৎসকরা।
তিনদিন সুপার স্পেশালিটি বিভাগের চিকিৎসকেরা থাকতে পারেন। কার্যত স্বাস্থ্য শিবিরের মাধ্যমে ‘চলমান-হাসপাতাল’ পরিষেবা দেওয়ার ভাবনা। স্বাস্থ্য শিবিরে সাধারণ রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি পোর্টেবল ইসিজি পরিষেবা দেওয়ারও পরিকল্পনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক মাধ্যমে এই কর্মসূচির পোস্টার ছড়াতে শুরু করেছে। অভিষেকের ‘ডক্টর্স সামিট’ ঘিরে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণও তুঙ্গে। ‘ডক্টর্স সামিটে’র আয়োজক হিসাবে প্রকাশ্যে উল্লেখ শাসকের তরুণ চিকিৎসক ব্রিগেড। একেবারে গোড়ায় ‘ডক্টর্স সামিটে’র আয়োজক হিসাবে নাম ছিল তৃণমূল নেতা শান্তনু সেন, হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক শেখ মিরাজউদ্দিনের। পরবর্তী ক্ষেত্রে আমন্ত্রণ পত্রের আয়োজক হিসাবে কার্ড থেকে শান্তনু সেনের নাম বাদ পড়ে। নেপথ্যে রয়েছে দলীয় অন্দরের অন্য সমীকরণ।
পরিবর্তে আয়োজক হিসাবে কার্ডে নাম ছাপা হয় চিকিৎসক অভীক ঘোষের। কোভিডের সময় ডায়মন্ড হারবারে ‘ডক্টর্স অন হুইলস’ কর্মসূচি রূপায়ণে সামনের সারিতে ছিলেন এই তরুণ চিকিৎসক।
আনুষ্ঠানিক ভাবে কার্ডে নাম না থাকলেও আমতলার সভায় সুদীপ্ত রায়দের প্রবেশের উপরে নেকনজর রয়েছে শান্তনু শিবিরের। সূত্রের খবর, অনুগামী চিকিৎসকদের নিয়ে স্বাস্থ্যশিবিরে যোগ দিতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। এখনও পর্যন্ত সদুত্তর আসেনি বলেই খবর।
শান্তনু সেন ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের বক্তব্য, এর আগে ডায়মন্ড হারবার-সহ নবজোয়ারে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করে তাঁরা সুশান্ত রায়, অভীক দে’র কোপে পড়েছিলেন। শনিবারের সভার পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে অভিষেক পাশে থাকবেন সেই বার্তা পেতেও আগ্রহী শান্তনু সেন ঘনিষ্ঠরা।
শেখ মিরাজউদ্দিন বলেছেন, তিলোত্তমা কাণ্ডের পর দলের মধ্যে বাইরে দলের ভিতরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সেটাই সম্ভবত স্পষ্ট করবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল পন্থী চিকিৎসকদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে। মানুষের মধ্যেও ধোঁয়াশা রয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সভায় যাঁরা থাকবেন তাঁরাই আসল তৃণমূল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য় ব্যবস্থায় অভিষেকের ‘ডায়মন্ড হারবার’ মডেল আরও একবার নজির গড়বে। কোভিডের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও ডায়মন্ড হারবার সব জেলার মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। চিকিৎসকদের আন্দোলনে যখন গোটা রাজ্য তোলপাড় হয়েছে, তারপর এই ধরনের একটি বৈঠক স্বাভাবিকভাবেই নজির স্থাপন করবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।