কলকাতা: চিড়িয়াখানায় যাঁরা ঢুকেছিলেন, তাঁরা কি বহিরাগত? নাকি কর্মী? সেটা আগামী দুদিনের মধ্যে চিড়িয়াখানার রেগুলার কর্মীদের দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে। আলিপুর চিড়িয়াখানায় ইউনিয়ন রুম দখলের অভিযোগের মামলার প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে নির্দেশ দিল আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি বুধবার।
গত ২৪ জানুয়ারি আলিপুর চিড়িয়াখানায় বিজেপির ইউনিয়ন রুম দখলের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার প্রেক্ষিতে সোমবার হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহ। পাশাপাশি চিড়িয়াখানার আলমারি ভেঙে টাকা লুঠেরও অভিযোগ তোলেন তিনি।
সোমবার বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। মামলাকারী রাকেশ সিংয়ের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য আদালতকে জানান, ঘটনার দিন তিনটি পুলিশ পিকেট থাকা সত্ত্বেও ২০০-৩০০ বহিরাগত চিড়িয়াখানার ভিতরে ঢোকে। তাণ্ডব চালায়। মহিলাদের কর্মীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “চিড়িয়াখানায় কি বহিরাগতরা ঢুকেছিল?”
রাজ্যের পক্ষ থেকে এজি জানান, “কোনও বহিরাগত নয়। প্রত্যেকেই চিড়িয়াখানার কর্মী।” বিচারপতি এজিকে প্রশ্ন করেন, “কতজন মানুষ ঢুকেছিলেন চিড়িয়াখানায়?” এরপরই বিচারপতি বলেন, “চিড়িয়াখানা বন্ধ। তারপরেও কারা ভিতরে ঢোকে? আমি কিন্তু পশুপ্রেমী। পশুদের কোনও ক্ষতি হলে আদালত বরদাস্ত করবে না। চিড়িয়াখানা চত্বরটাও সুরক্ষিত রাখতে হবে।”
এরপর রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, অনেকেই সকালে এই চত্বরে প্রাতঃভ্রমণে আসেন। তখন বিচারপতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “কোনও পশুপ্রেমী যদি ঢুকতে চান, তাহলে কি অনুমতি দেওয়া হবে? কী করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিল?”
এদিনের সওয়াল জবাব শেষে বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২৪ তারিখ অর্থাৎ ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ কী কী দেখা গিয়েছে, তার রিপোর্ট জমা দিতে হবে। যে ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ, সেটা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দেবে। তার বাইরেও কোনও ফুটেজ থাকলে. সেটা দেখবে কর্তৃপক্ষ। বাইরের ক্যামেরার ফুটেজ দেখবে আলিপুর এবং ওয়াটগুঞ্জ পুলিশ। তার রিপোর্টের ভিত্তিতেই বহিরাগতদের চিহ্নিত করে রিপোর্ট দিতে হবে। পাশাপাশি বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে, ওই জায়গায় অশান্তি না হয়। শান্তি বজায় রাখতে হবে।
মামলার প্রেক্ষাপট
চিড়িয়াখানার কর্মী ইউনিয়ন এতদিন পর্যন্ত বিজেপির দখলে ছিল। অভিযোগ, সোমবার সকালে সেই ইউনিয়ন তৃণমূল কংগ্রেস দখল করেছে। চিড়িয়াখানার ইউনিয়ন রুমের সামনে বিজেপির পতাকা সরিয়ে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
চিড়িয়াখানার মূল গেটের সামনেই ইউনিয়ন রুম। সোমবার সকালে সেই ইউনিয়ন রুমের দখল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায় চিড়িয়াখানায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে দশটা-এগারোটা নাগাদ গোটা চত্বর ঘিরে ফেলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। দেখা যায়, দলীয় পতাকা হাতেই পাঁচিলের ওপর উঠে যান তৃণমূল কর্মীরা। ইউনিয়ন রুমের বাইরে বিজেপির পতাকা খুলে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেন। স্লোগান দিতে থাকেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। খবর পেয়ে সেখানে জড়ো হতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। তাতে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে এলাকায়।
অভিযোগ, বিজেপির সমস্ত ফ্ল্যাগ ছিড়ে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বিজেপি কর্মীরাও। প্রতিরোধ গড়ে তুললে, তাঁদের ওপরেও আক্রমণ হয় বলে অভিযোগ। রাকেশ সিংয়ের বক্তব্য, ৫-৬ জন বিজেপি কর্মী গুরুতর আহত হন। সেদিনই চিড়িয়াখানার সামনে দাঁড়িয়ে আইনি লড়াইয়ের পথে নামার হুঁশিয়ারি দেন রাকেশ সিং।
আরও পড়ুন: মতাদর্শ আলাদা, দাবি একটাই! স্কুল খুলতে জোড়া আন্দোলনে তপ্ত বিকাশভবন চত্বর