কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্য সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধীরা। টাকার বিনিময়ে চাকরি, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পাওয়ার মতো গুরুতর সব অভিযোগ সামনে এসেছে। চাকরি তো হল, তাই বলে বদলিও! সেখানেও বেনিয়মের অভিযোগ? শিক্ষক বদলিতে স্বচ্ছতা আনা হবে বলেই ঘটা করে উৎসশ্রী (Utsashree) পোর্টাল চালু করেছিল রাজ্য। কিন্তু তারপরও বদলি হয়েছে অফলাইনে? এমনই অভিযোগ উঠেছে উল্টোডাঙার এক স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে সেই অভিযোগও জমা পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে রাজ্য সরকারের বদলি নীতি নিয়ে। একেক জনের ক্ষেত্রে কি একেক রকম নিয়ম? অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে উল্টোডাঙার সেই সরকারি স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিল TV9-এর ক্যামেরা। অফলাইনে বদলির কথা স্বীকার করলেন প্রধান শিক্ষিকাও।
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সম্প্রতি শিক্ষক বদলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এরপরই প্রকাশ্যে এল এই অভিযোগ। উল্টোডাঙা গার্লস হাইস্কুলে গত ৩০ এপ্রিল বদলি হয়ে এসেছেন ওই শিক্ষিকা। আর সেই বদলি নিয়েই প্রশ্ন তুলছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। প্রশ্ন উঠছে, উৎসশ্রী পোর্টাল এক বছর পর কী ভাবে পোর্টাল এড়িয়ে তাঁর বদলি প্রক্রিয়ায় সিলমোহর পড়ল?
প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, স্পেশাল কেস হিসেবে বদলি হয়েছিলেন ওই শিক্ষিকা। পোর্টাল চালু হওয়ার পরও কেন অফলাইনে বদলি হলেন, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারনা নেই প্রধান শিক্ষিকার। তাঁর দাবি, হতে পারে আগে আবেদন করেছিলেন।
অভিযুক্ত শিক্ষিকার দাবি, ২০১৮ সালে তিনি বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বাঁকুড়ার একটি স্কুল থেকে বনগাঁর স্কুলে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে। সেখানে ভূগোল শিক্ষিকার পদ খালি না থাকায় চার বছর পর উল্টোডাঙার স্কুলে বদলি হয়েছেন তিনি। এবছরের ৩০ এপ্রিল কাজে যোগ দেন তিনি। অনলাইন ব্যবস্থা চালুর অনেক আগেই আবেদন করায় উৎসশ্রী পোর্টালে বদলি সংক্রান্ত নথি দাখিলের প্রয়োজন হয়নি বলে মত অভিযুক্ত শিক্ষিকার।
শিক্ষিকার দাবির সত্যতা যাচাই করতে কসবায় অবস্থিত কলকাতা জেলার ডিআই কার্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছিল Tv9 বাংলা। ডিআই সঞ্জয় চট্টোপাধ্য়ায় স্পষ্টই জানিয়ে দেন, আগে কেউ আবেদন করতেই পারেন, তবে উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হওয়ার পর পোর্টালের মাধ্যমেই করতে হবে আবেদন।
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের প্রশ্ন, সকলকে ‘উৎসশ্রী’ পোর্টালের মাধ্যমে বদলির আবেদন করতে হলে উল্টোডাঙার স্কুলের শিক্ষিকা ব্যতিক্রম কেন? কীসের বিনিময়ে এই বদলি? আর এখানেই দুর্নীতির অভিযোগে সরব প্রধান শিক্ষক সংগঠন অ্যাডভান্স সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির বক্তব্য, উৎসশ্রী পোর্টাল নিয়ে তদন্ত হলেও কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে। একজন শিক্ষিকা এই সুযোগ পেলে বাকিরা কেন পাবে না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।
আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এভাবে একই সঙ্গে আলাদা আলাদা নিয়ম চালু থাকতে পারে না। অনলাইনে বদলি একবার চালু হয়ে গেলে, সবার ক্ষেত্রে সেটাই জারি থাকবে। দু পক্ষের যুক্তি, পাল্টা যুক্তির মধ্যে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে তা হল, একটাই নিয়ম নিয়ে এত ভিন্ন মত কেন? কেন কোনও স্বচ্ছ ধারনা নেই? কারা আবেদন করতে পারবেন, কারা পারবেন না, সেটা স্পষ্ট হওয়া দরকার, স্পষ্ট ভাবে সবাইকে জানানো দরকার বলেই মনে করছেন শিক্ষক সংগঠনগুলি।