কলকাতা: নিঃসন্দেহে এ এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই প্রথম ওয়েস্ট বেঙ্গল লিগাল সার্ভিসেস অথরিটির প্যানেলভুক্ত হলেন তৃতীয় লিঙ্গের কোনও আইনজীবী। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের সম্মতিতেই অঙ্কন বিশ্বাসকে প্যানেলভুক্ত করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অঙ্কনের এই সাফল্য নিঃসন্দেহে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য তথা গোটা সমাজের জন্য এক প্রশংসনীয় দৃষ্টান্ত।
অঙ্কন বিশ্বাস প্যানেলভুক্ত হয়েছেন অঙ্কনি বিশ্বাস নামে। যোগেশচন্দ্র আইন কলেজ থেকে পাশ করেন অঙ্কন। বারাসত আদালত থেকে তাঁর প্র্যাকটিস শুরু। অঙ্কন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে নিয়ে বহু মামলা লড়েছেন। বিভিন্ন আইনি সহায়তাও দেন তিনি। আর এই লড়াই লড়তে গিয়ে নানা সময় বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি বাসে মহিলা ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের হেনস্তা নিয়ে সরব হন তিনি। মেয়ে ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বাসে শ্লীলতাহানি রুখতে বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করার জন্য মামলাও করেন প্রধান বিচারপতির ঘরে।
এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি পর্বে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলও জানান, দেশের বেশ কিছু রাজ্যে এই সুবিধা রয়েছে। নারীদের সুরক্ষায় হেল্পলাইন নম্বর চালু করা যায় কি না তা নিয়ে রাজ্যের মতামত জানতে চান তিনি। খরচ-সহ বাকি তথ্য নিয়ে ১২ অগস্ট রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের অ্যাসিসটেন্ট রেজিস্ট্রার পদে পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। প্রসঙ্গত, এতদিন এই পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ফর্মে নিজেদের অবস্থান জানানোর সুযোগ ছিল কেবলমাত্র পুরুষ ও মহিলাদের। অঙ্কনের চেষ্টাতেই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সেখানে যুক্ত হয়েছে ‘আদার্স’ (Others) ক্যাটাগরি। আদালত সে নির্দেশ দিয়েছে। অগস্টেই এই পরীক্ষা।
অঙ্কনের কথায়, “আমার জন্য এটা একটা বড় দিন। আদালত যে এভাবে বিষয়টা নজরে আনবে, প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে যে এ ভাবে অনুমোদন পাব এটা সত্যিই ভাবিনি কোনওদিন। আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। গত আট বছর ধরে নিম্ন আদালতে কাজ করতে করতে বিভিন্ন সময় হেনস্থার শিকার হয়েছি। রাস্তায় মারও খেয়েছি। কেবল মাত্র লিঙ্গ বৈষম্যের জন্য, গলার স্বরের জন্য বাসে মারধর করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। ট্রান্সজেন্ডার প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে কাজের দিগন্ত যেমন খুলে গেল, তেমনই দায়িত্বও বেড়ে গেল।” আরও পড়ুন: SSKM#MeToo: এসএসকেএমকাণ্ডে অবশেষে চার্জশিট পেশ পুলিশের