কলকাতা: সিঙ্গল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চ ঘুরে রক্ষাকবচ পাননি। গরু পাচার মামলায় বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে তলব করেছে সিবিআই। আজ, বুধবার তাঁকে নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবারই তিনি কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। কলকাতায় নিজের ফ্ল্যাটে রয়েছেন তিনি। তবে আজ কি আদৌ অনুব্রত মণ্ডল হাজিরা দেবেন? সেটাই দেখার।
অনুব্রতর দেহরক্ষীকে মঙ্গলবারই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারীরা। বুধবার সকালে পর্যন্ত বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফ থেকে কোনও ‘পাইলট কার’ পাঠানো হয়নি। গরু পাচার কাণ্ডে চক্রী এনামুল হক, গোলাম মোস্তাফা ও বিএসএফ কর্তা সতীশ কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনুব্রতর নাম জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তারপরই তাঁকে বারবার জেরার জন্য ডাকা হয়। বারবারই হাজিরা এড়িয়েছেন অনুব্রত। রক্ষাকবচের জন্য দ্বারস্থ হয়েছেন আদালতের। তাঁর সেই আবেদন গ্রাহ্য হয়নি। বুধবার সকাল ১১টার সময়ে তাঁকে হাজিরা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন অনুব্রতর হাজিরা দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এখনও পর্যন্ত অনুব্রত আইনজীবীর তরফে নেতিবাচক কিছু জানানো হয়নি। অনুব্রতকে জেরা করার বিষয়ে তৎপর সিবিআই। নিজাম প্যালেসে রয়েছেন সিবিআই-এর জয়েন্ট ডিরেক্টর পঙ্কজ শ্রীবাস্তব।
হাজিরা এড়াতে এক নজরে অনুব্রতর পদক্ষেপ
৭ মার্চ গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে নোটিস পাঠায় সিবিআই। নোটিসে উল্লেখ থাকে ১৪ মার্চ যাতে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেন তিনি।
ওই দিনই অর্থাৎ ৭ মার্চ গ্রেফতারির আশঙ্কায় রক্ষাকবচ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যান অনুব্রত। অনুব্রত আইনজীবীর বক্তব্য, তাঁক মক্কেল অসুস্থ। তিনি সিবিআই-এর মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। কিন্তু তাঁকে যেন বীরভূম কিংবা তাঁর বাড়ির কাছাকাছি কোথাও গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর পক্ষে কলকাতায় আসা সম্ভব নয়। পাশাপাশি অনুব্রতর বিরুদ্ধে যেন কোনও কড়া পদক্ষেপ না করে সিবিআই। এই আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বীরভূম জেলা সভাপতি।
১১ মার্চ বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ করে দেয়। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ জানায়, এই মামলায় এখনই আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই। বিকল্প আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলে আগাম জামিনের আবেদন তিনি করতে পারেন। তবে সিবিআইয়ের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব মেটানোর যে আর্জি অনুব্রতর ছিল, তা খারিজ করে দেয় আদালত। যেহেতু বীরভূমের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে দেখা গিয়েছে,আর সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতেও রয়েছে। তাই আদালত প্রাথমিকভাবে মনে করে অনুব্রত ওতটাও অসুস্থ নন যে গৃহবন্দি থাকতে হবে। সে সময় অনুব্রত মণ্ডল এসএসকেএম হাসপাতালে ছিলেন। সেখান থেকে নিজাম প্যালেসের দূরত্ব কয়েকশো মিটার। তাই রক্ষাকবচের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
১৪ মার্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যান তিনি। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখে।
অর্থাৎ সিবিআই মুখোমুখি হতেই হবে কেষ্টকে। অনুব্রতর দেহরক্ষীকে মঙ্গলবারই ম্যারাথন জেরা করেন তদন্তকারীরা। গরু পাচার মামলায় ধৃতদের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের যোগসূত্র খুঁজে পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। তা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তাঁরা। কারণ অভিযুক্ত ও একাধিক সাক্ষী এই মামলায় অনুব্রতর নাম নিয়েছেন জেরায়।
আরও পড়ুন: তপন কান্দু খুনের প্রত্যক্ষদর্শীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, সুইসাইড নোটে বিস্ফোরক দাবি