কলকাতা : কলকাতা পুরভোটে ফের একবার বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বামেরা মাত্র ২টি আসন পেয়েছে, তবে ভোট শতাংশের বিচারে আশার আলো দেখছে আলিমুদ্দিন। আর ফল প্রকাশের দিন থেকেই একাধিক ওয়ার্ডে উঠল দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা দাপাদাপি চালিয়েছে বলে অভিযোগ বামেদের।
মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে পুরভোটের ফল। সেই ফল প্রকাশের পরই ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই-এর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, ভিডিয়োতে দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর জয় ঘোষণা হওয়ার পরেই বামেদের কার্যালয়ে ঢুকে কেউ বা কারা তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেয়। ওপর থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় জিনিসপত্র। আর রাতেই কলকাতার আরও কয়েকটি দলীয় কার্যালয়ে একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ বাম শিবিরের। ১৪২ ও ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
গার্ডেন রিচ ইস্ট এলাকায় ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআইএমের আঞ্চলিক কমিটির অফিসে গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ কর্মীদের। দুটো তালা ভেঙে ভিতরে তৃণমূল কর্মীরা চড়াও হয়ে বলে জানাচ্ছেন তারা। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী রণজিৎ শীল। তাঁর দাবি, তৃণমূল করেছে, এ কথা প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করবেন তিনি। তৃণমূল নেতার আরও দাবি, বরাবরই শান্তিপূর্ণ ভোট চেয়েছেন তিনি। একই ছবি দেখা গিয়েছে ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডেও।
কলকাতা পুরসভার ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই-এর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। প্রকাশ্যে এসেছে সেই ভিডিয়ো। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর জয় ঘোষণা হওয়ার পরেই দেখা গিয়েছে এই ছবি। বাস্তহারা সমিতির অফিসও দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বামেদের কার্যালয়ে মঙ্গলবারই ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে তৃণমূলের বিজয়োৎসব চলাকালীম উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এ দিন তৃণমূলের জয়লাভের পর ওই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কার্যত দলীয় কার্যালয় দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। এলাকার মানুষ এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। তবে এলাকায় গিয়ে খতিয়ে দেখা হয়েছে যে, প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োতে যে বাড়িটি দেখা যাচ্ছে, সেটাই ওই এলাকায় বামেদের কার্যালয়। কার্যালয়ের সামনে ডিজে বাজিয়ে চলে তৃণমূলের বিজয়োৎসব। আর সেখানেই উপস্থিত রয়েছেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তী ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তবে ঘটনার সময় মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার বার্তা দিয়েছে দলীয় কর্মীদের। প্রকাশ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়েছেন, বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠলে বহিষ্কার করা হবে কর্মীকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু পুরভোটের ফল প্রকাশের পর যে ছবি দেখা গিয়েছে, তাতে ফের একবার সরব বিরোধীরা। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘যারা করেছে, তারা ঠিক করেনি’। যারা বিজয়ী তাদের আরও বেশি বিনয়ী হওয়া উচিৎ বলেও বার্তা দিয়েছেন তিনি।