কলকাতা: ২৫ নভেম্বর আগরতলায় পুরভোট। তার আগে ২২ ডিসেম্বর ফের ত্রিপুরায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরভোটের আগে তাতছে টিলার রাজ্য। বিপ্লবগড়ে আজ, শুক্রবার সদলবলে বাবুল সুপ্রিয়। ঘাসফুলের কর্মসূচি নিয়ে সতর্ক পুলিশ প্রশাসনও।
তবে বাবুলের ত্রিপুরা সফর নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিজেপির সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে তারও উত্তর দিলেন বাবুল সুপ্রিয়। দিলীপকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ” ওঁ একজন এন্টারটেনমেন্ট ক্যারেক্টার।”
প্রত্যেকদিনের মতো শুক্রবারও নিউটাউনের ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বাবুলের ত্রিপুরা সফর নিয়ে দিলীপ বলেন, “ত্রিপুরায় তৃণমূল প্রার্থী দিতে পেরেছে? কার হয়ে প্রচার করবেন? বিনা লড়াইয়ে বিজেপি জিতে যাচ্ছে। ওরা প্রার্থী পাচ্ছে না। আগে প্রার্থী দিন, তারপর তো প্রচার। কার হয়ে কথা বলবেন?”
দিলীপ ঘোষের পাল্টা বাবুল বলেন, “প্রত্যেকদিন মর্নিং ওয়াক করে ওঁর শরীর ভালো থাকুক। দিলীপ ঘোষ একজন এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যাক্টর বাঙালিদের জন্য। দিলীপ ঘোষ প্রত্যেকদিন মর্নিংওয়াকে যা বলেন, তাই নিয়ে যদি উত্তর দিতে হয়, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক স্তরটা এক হয়ে যাবে।”
বাবুল-দিলীপ টানাপোড়েন রাজনৈতিক মহলে চর্চিত। এর আগেও একাধিকবার বাবুলকে বিঁধেছেন দিলীপ। সে বাবুল যখন বিজেপিতে ছিলেন, তখন থেকেই তাঁদের শীতল লড়াই বঙ্গ রাজনীতিতে সবার জানে। কিন্তু দিলীপের কোনও কথাতেই এখন আর বিশেষ আমল দিতে চান না বাবুল। দিলীপ প্রসঙ্গে স্পষ্ট জানালেন, “ওঁ সকালে যেটা বলেন, সেটা সারাদিন মানুষ এনজয় করেন। ওঁকে ওঁর মত বলতে দিন। ওঁ কথায় কোনও কিছু এসে যায় না।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও সরাসরি বাবুলকে তোপ দেগে বলেছিলেন, “হ্যাঁ, একটা ব্যাঙ কোথাকার! যতদিন বিজেপিতে ছিলেন ততদিন বিজেপির ব্যাঙ ছিলেন। বিজেপির মতো মহাসমুদ্রে টিকতে পারেননি। তাই ডোবায় গিয়ে ডুব দিয়েছেন।” পাশাপাশি, দিলীপ আরও বলেন, “যে বা যাঁরা দল ছেড়ে যাচ্ছেন তাঁদের ভয় দেখিয়ে বা প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের যাওয়ায় বিজেপির কোনও ক্ষতি হবে না।”
দলে থাকতেই দিলীপ-বাবুল সম্পর্ক বিশেষ ভাল নয়। তৃণমূলে সদ্য যোগদানের পর দিলীপ ঘোষকে বর্ণপরিচয় উপহার দেওয়ার কথাও বলেন বাবুল। পাল্টা তাঁকে ‘রাজনৈতিক পর্যটক’ বলে আক্রমণ করেন দিলীপ। এমনকী, বাবুলের দলত্যাগের পর দিলীপ বলেছিলেন, “উনি তারকা। দলের হননি কখনও। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। আবেগ দিয়ে রাজনীতি করেন।”সেপ্টেম্বরেই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন বাবুল সুুপ্রিয়। তার আগেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন তিনি।
দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বিজেপিতে থাকলেও সংগঠনের সঙ্গে গাঁটছড়া কখনই মজবুত হয়নি বাবুলের। মন্ত্রিত্ব হারানোর পর যে বিষয়টি আরও বিপক্ষে যায় আসানসোলের সাংসদের। এমন কানাঘুষোও শোনা যায় যে, বঙ্গ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর ভূমিকায় খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না। যে কারণে মন্ত্রিত্ব হারা বাবুলকে সংগঠনের কোনও ভূমিকাতেও দেখা যায়নি। ফলে পদ্ম ঘরে ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন এই গায়ক-সাংসদ।
মন্ত্রিত্ব হারানোর পর তিনি নিজে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে তার বহিঃপ্রকাশ সোশ্যাল মিডিয়াতেই বারংবার দেখা যায়। সঙ্গে বাবুল এটাও দাবি করেন যে তিনি কখনই বিজেপি ছাড়া অন্য কোনও দলকে সমর্থন করবেন না। যদিও সেসব এখন অতীত। আপাতত নতুন ছকে বাবুল। একদা প্রতিপক্ষ অভিষেকের হাতে হাত রেখে নতুন পথ চলার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। বাবুলের কথায়, “প্রথম একাদশে সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি মমতা দিদি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
অভিষেকের সঙ্গে বাবুলের রাজনৈতিক রসায়নও এখন বঙ্গ রাজনীতিতে অত্যন্ত চর্চিত বিষয়। তবে এসবকেই ‘লোক খাওয়ানো’ বলে কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। এবার বাবুলের ত্রিপুরা সফরকেও কটাক্ষ করলেন দিলীপ।
আরও পড়ুন: ‘প্রার্থীই তো দিতে পারেনি তৃণমূল, কার হয়ে প্রচার করবেন?’ বাবুলের ত্রিপুরা সফরকে খোঁচা দিলীপের