কলকাতা : যে কেন্দ্রে দীর্ঘদিন বিধায়ক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সেখানে বাবুল সুপ্রিয়কে প্রার্থী করায় প্রথম থেকেই অনেক গুলো প্রশ্ন উঠেছিল। দলবদলের গন্ধ এখনও গায়ে লেগে। একসময় বিজেপির মন্ত্রী ছিলেন শুধু নয়, তাঁর হিন্দুত্ববাদী ‘ইমেজ’ ও যে বালিগঞ্জের মতো কেন্দ্রে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কাও ছিল। সব জল্পনা শেষে বালিগঞ্জ কেন্দ্রে উপ নির্বাচনে বাবুল জয়ী হয়েছেন ঠিকই, তবে জয়ের ব্যবধান অনেকটাই কম। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৭৩ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন, এবার সেখানে ভোটের ব্যবধান মাত্র ২০ হাজার। যদিও ঘাসফুল শিবিরের দাবি, তাঁদের অঙ্ক আদতে মিলিয়ে দিয়েছে মানুষ।
২০ হাজার ৩০ ভোটে জয়ী হয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এই প্রথমবার ভোটে লড়েছেন তিনি। বাবুল বলছেন, বিরোধীরা যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তাতে এটা তাঁর নৈতিক জয়। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে ভোট ব্যবধান নিয়ে। সুব্রত মুখোপাধ্যায় যে ব্যবধানে জিতেছিলেন, সেই তুলনায় বাবুলের ব্যবধান অনেকটাই কম।
এ দিন জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাবুল। এই জয়কে মা-মাটি-মানুষের জয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বাবুল বলেন, ‘খুব ভাল লাগছে। এটা আমার নৈতিক জয়। যে ধরনের নোংরা রাজনৈতিক প্রচার করেছিল বিরোধীরা, যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে মিথ্যাচার করা হয়েছিল। তাতে আমরা কোনও জবাব দিই নি। এবার মানুষই শিক্ষা দিল। আগামী দিনে ভাল কাজ করার চেষ্টা করব।’ তবে রাজ্যর মন্ত্রিসভায় তাঁর জায়গা হবে কি না, সে ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বাবুল।
ভোটের ব্যবধান নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন বাবুল। তাঁর দাবি, উপ নির্বাচনে যে পরিমান ভোট পড়েছে, তাতে ওই ব্যবধান থাকাটাই স্বাভাবিক। এটা খুব খারাপ ফল নয়। বাবুল জানান, অনেক নেতাই তাঁকে বলেছেন ২০ হাজারের বেশি ব্যবধান খারাপ নয়। একই কথা বলছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা বালিগঞ্জে বাবুলের সেনাপতি দেবাশিস কুমার। তিনি জানান, উপ নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তাই হিসেব করে প্রথম থেকেই তিনি বলে এসেছেন ২০ হাজার ভোটে জিতবেন। আর সেটাই হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মহলের দাবি, বাবুল জয়ী হলেও বালিগঞ্জ কেন্দ্রের এই ব্যবধান কপালে ভাঁজ ফেলছে ঘাসফুল শিবিরের। এই কেন্দ্রে ৫১ শতাংস সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে। তাই বাবুলের পুরনো ভাবমূর্তি প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি তাঁরা বালিগঞ্জ কেন্দ্রে কোনও প্রতিযোগিতাতেই ছিলেন না, কারণ সেখানে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা বেশি।