AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Behala Accident: ‘একটা বানান…’, সকালে মাকে শেষ কথা বলেছিল সৌরনীল, বিকালে কাচের গাড়িতে ফিরল নিথর শরীর

Behala Accident: সৌরনীলের পরীক্ষা ছিল শুক্রবার। অন্যান্য দিন বাবার সঙ্গে সাইকেল চেপে স্কুলে যায়। কিন্তু বাবার সাইকেলের পিছনের চাকাটা লিক হয়ে গিয়েছিল। তাই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে অটো ধরেই স্কুলে পৌঁছেছিলেন সৌরনীলের বাবা।

Behala Accident: 'একটা বানান...', সকালে মাকে শেষ কথা বলেছিল সৌরনীল, বিকালে কাচের গাড়িতে ফিরল নিথর শরীর
পথ দুর্ঘটনায় মৃত ছোট্ট সৌরনীল
| Edited By: | Updated on: Aug 05, 2023 | 8:12 AM
Share

কলকাতা: আজ পরীক্ষা ছিল। রাত থেকে একটা বানান গুলিয়ে ফেলছিল সৌরনীল। কিন্তু আজ সকালে যখন বাবার হাত ধরে ঘরের চৌকাঠ পেরোচ্ছিল, মাকে এক্কেবার ঠিকঠাক বানানটা বলে গিয়েছিল ছোট্ট সৌরনীল। মা খুশি। বলেছিলেন, ‘বাবা পরীক্ষায় খাতায় ঠিক করে লিখে আসিস…’। ব্যস, এটাই মা-সন্তানের শেষ কথা। বিকালে সৌরনীলের সাদা চাদর মোড়ানো শরীরটা কাচের গাড়িতে ফিরল ঘরে। বাবা তখনও হাসপাতালের বেডে। শুক্রবারের সকালটা গোটা বাংলাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বুকে ভয় ধরিয়েছে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময়ে স্কুলের সামনেই বেপরোয়া লরির চাকায় পিষ্ট হয়েছে ক্লাস টু-এর সৌরনীলের শরীর। আর তার বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে। বেহালার মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় হায় ফেলছে বাংলা। স্কুল ছাত্রের মৃত্যুতে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল এলাকা। আগুন জ্বলছে, বিক্ষোভ চলেছে, পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- সবই হয়েছে। কিন্তু সৌরনীলের মা? তিনি বাকরুদ্ধ। কাঁদতে কাঁদতে চোখ থেকে আর জল বেরোচ্ছে না তাঁর।

সকালে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে যখন সৌরনীলের দেহ, তখন বাইরে বসে ছেলের নীল- কালো স্কুল ব্যাগটাই আঁকড়ে ধরে বসেছিলেন তার মা। ওই একটাই যে সম্বল। ওই স্কুল ব্যাগটা নিয়েই সকালে বেরিয়েছিল তাঁর সন্তান। আজ সন্তানের শরীরে আর সাড় নেই। ব্যাগটাই যেন জীবন্ত, যেন বলছে অনেক কিছু!

সৌরনীলের পরীক্ষা ছিল শুক্রবার। অন্যান্য দিন বাবার সঙ্গে সাইকেল চেপে স্কুলে যায়। কিন্তু বাবার সাইকেলের পিছনের চাকাটা লিক হয়ে গিয়েছিল। তাই দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে অটো ধরেই স্কুলে পৌঁছেছিলেন সৌরনীলের বাবা। অটো থেকে স্কুলের সামনে নামেন। রাস্তা পেরোতে গিয়েই মর্মান্তিক ঘটনা। ছুটে আসা লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে যায় বাচ্চার শরীর। আর বাবার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সৌরনীলের জন্মদিন ছিল ২৫ অগস্ট। আর মাত্র ক’টা দিন। পরীক্ষা শেষে ছেলেকে ‘স্পাইডারম্যান’ পুতুল কিনে দেওয়ার কথা ছিল। সব শেষ!

বেহালার নবপল্লির রবীন্দ্রনাথ টেগর রোডের রং চটা তিন তলা বাড়ির সামনে আজ ভেঙে পড়েছে গোটা পাড়া। সকলেই নির্বাক। শুধু চোখের পরিভাষা বলছে, ‘মা কীভাবে বাঁচবে…’ সৌরনীল তার বাবা-মায়ের বেশি বয়সের সন্তান। ‘সিঙ্গল চাইল্ড’। আর সেই চোখের মণি আজ তারাদের দেশে।

সৌরনীলের মা শুধু বললেন, “আমাকে শুধু বাবাই ফোন করেছিল…” আর কিছু বলতে পারেননি তিনি। দুপুরের পর থেকে আর কোনও কথা বলতেও পারছেন না। এক দিকে সন্তান শেষ, অন্যদিকে, স্বামী মৃত্যুমুখে। একটা দুর্ঘটনা শেষ করে দিল সবটা।

সৌরনীলের বাড়িতে যখন পৌঁছয় কাচের গাড়িটা, তখন আকাশে মেঘ জমেছে।  গাড়ির ভিতরে চাদর মোড়ানো ছোট্ট শরীর। বাইরে গোটা পাড়া। নিশ্চুপ, নির্বাক, পিনপতন স্তব্ধতা। ফুটফুটে ছোট্ট জলি ছেলেটা যে পাড়া মাতিয়ে রাখত! ভগবান যে বড়ই নিষ্ঠুর! দু’চোখ ভরা জলে একথা বলছেন সৌরনীলের পাড়ার কাকু-কাকিমা-দিদিমারা।

বেহালার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ব্যারাকপুরে এক অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, “আমি যখন বাড়ি থেকে বের হই, তখন কিছু ছিল না। ঘটনাটি দুঃখজনক।”