কলকাতা: সরষের মধ্যেই ভূত। টাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বিকিয়ে গিয়েছেন দলের কর্মীরা। তার জেরেই অন্তর্ঘাত ও বিপুল হার। পুরভোট নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন পরাজিত বিজেপি প্রার্থীরা।
পুরভোটে কেন ভরাডুবি? অন্তর্তদন্তে পুরভোটের প্রার্থীদের মুখোমুখি অমিত মালব্যরা। হেস্টিংসের সেই বৈঠকে প্রার্থীরা খোলাখুলি বললেন অন্তর্ঘাতের কথা। ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় খোলাখুলি ক্যামেরার সামনে বললেন, “নিজের দলে খামতি ছিল। এক একটি ওয়ার্ড থেকে প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন পড়েছিল। যাঁরা টিকিট পাননি, তৃণমূল তাঁদের টাকা পয়সা দিয়ে কিনে নিয়েছিল। সবাই মোটামুটি বিকিয়ে গিয়েছিল। তাঁরাই আমাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন।”
বিধানসভা ভোটে ১১ টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ,পুরভোটে মাত্র তিনটি আসনে জিতেছে তারা। রাজ্য নেতৃত্বও কি ততটা তৎপর ছিল? কী বললেন শীর্ষ নেতৃত্ব? ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মৌসুমী ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের যাঁরা হেড রয়েছেন, তাঁদেরকে আমরা আমাদের সমস্যাগুলি জানিয়েছি। সমস্যা প্রচুর ছিল। কিছু তো ম্যান মেড প্রবলেম। যেগুলি অহেতুক বানানো হয়েছিল।”
বিধানসভা ভোটে ২০০ আসনের স্বপ্ন দেখিয়ে মিলেছে ৭৭ টি আসন। তার ৭ মাসের মধ্যে কলকাতার ভোটপ্রাপ্তি হিসাবে বামেদের থেকে পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। অসন্তোষ, অন্তর্ঘাতের দাওয়াই না পেলে বিপদ বাড়বে গেরুয়া শিবিরের। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এগুলো বিশ্লেষণের বিষয়। এগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামী দিনে আমরা চিন্তাভাবনা করব। যাঁরা এই ধরনের কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দল কী ব্যবস্থা নেবে, দেখা যাক।”
লোকসভা ভোটের তিন বছরও বাকি নেই। তার আগে বড় নির্বাচন বলতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির রাজ্য জোড়া পুরভোট। সেখানেও বিজেপির একই হাল হলে, বামেরাই কার্যত প্রধান বিরোধী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চিন্তায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।
এদিকে, রাজ্য বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ। বৈঠকে থাকতে পারেন দলের শীর্ষস্তরের নেতা বি এল সন্তোষ। বিজেপির রাজ্য কমিটির ঘোষণার পরে দলের মধ্যে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে, সেই বিদ্রোহ এবার জেলা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি এবং ইনচার্জদের নাম ঘোষণা পরে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার কয়েকজন বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। দলের রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ৫ বিধায়কও। পরিস্থিতি সামলাতেই আজকের বৈঠক বলে সূত্রের খবর।
যেভাবে সভাপতি নিয়োগ হয়েছে, যাঁদেরকে করা হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সব জেলায় বিজেপি বিধায়ক নেই, তাই সব ক্ষেত্রেই এমনটা হবে না। তবে যে সব জেলাতে বিজেপি বিধায়করা রয়েছেন, তাঁরা এই ভাবেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অর্থাৎ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে নিঃসন্দেহে বিজেপির মুখ পুড়ছে। এতে শুধু বাঁকুড়ার ক্ষেত্রে কিংবা মতুয়া সম্প্রদায়ের বিধায়করাই করছেন, তেমনটা নয়, এই বিক্ষুব্ধ নেতাদের সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আরও পড়ুন: Bengal BJP Whatsapp Group: ‘বিদ্রোহের আগুন’ কি দ্রুত ছড়াচ্ছে বিজেপিতে? আজ দলে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক