কলকাতা: লাগাতার বিদ্রোহ। কখনও হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কখনও খুলে আম দলকে আক্রমণ। একের পর এক নেতার বেসুরে বিপাকে বঙ্গ বিজেপি। পদ্ম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে নতুন কী রণকৌশল? ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতে আজ ফের বৈঠকে দলের বিক্ষুব্ধরা।
দুপুর ২টোয় কলকাতার পোর্ট গেস্ট হাউজ়ে বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতৃত্বের বৈঠক শুরু হবে। তাতে নেতৃত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। থাকবেন জয়প্রকাশ মজুমদার থেকে শুরু করে সায়ন্তন বসু, প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিজেপির পরিচিত শীর্ষ মুখরা। ডাকা হয়েছে দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া বাঁকুড়া, নদিয়ার বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের। যাঁরা মূলত কয়েক দশক ধরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। যাঁরা একসময়ে বঙ্গে বিজেপির আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারিত করতেন, তাঁরা থাকবেন এদিনের বৈঠকে। যাঁরা আজ বিক্ষুব্ধের তালিকাভুক্ত। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা রাজ্য বিজেপির কাছে বড় সেট ব্যাক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এঁরা প্রত্যেকেই বঙ্গে বিজেপির বীজ রোপণ করেছেন। যেভাবে পরিশ্রম করে জেলা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, তাতে তাঁদের নাম বাদ যাওয়াটা স্বাভাবিকভাবেই বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। দলের একাংশ বলছে, দলের দুঃসময়েও পাশে থেকেছেন এই প্রত্যেক নেতা। তাঁদের কেউই দল ছেড়ে সুবিধা দেখতে অন্য কোনও দলে যাননি। সংগঠনকে মজবুত করতে খেঁটেছেন। তাই তাঁদের নাম বাদ যাওয়া সংগঠনেরই আখেরে ক্ষতি।
তাই এই বিক্ষুব্ধ নেতারা যখন আলাদা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, তাতে বর্তমান নেতৃত্বকে এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে এটাই নির্ধারিত হতে পারে, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে অপসারণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে এটাই মূলত তাঁদের দাবি থাকবে। এটাকে সামনে রেখেই শনিবারের এই বৈঠক।
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সহ সভাপতি রাজকমল পাঠক বলেন, “বিজেপি নতুন আনার নামে অভিজ্ঞ নেতাদের ব্রাত্য করে দিয়েছে। এটা কি কখনও মানা যায়? এটা তো সংগঠনের ক্ষতি।”
শুরুটা হয়েছিল সায়ন্তন বসুর হাত ধরে। সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েন সায়ন্তন বসু। সঙ্গে সঙ্গেই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যান তিনি। সেই শুরু…গত কয়েকদিনে সেই রীতিই ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপিতে। সাংগঠনিক জেলা সভাপতি এবং ইনচার্জদের নাম ঘোষণা পরে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার কয়েকজন বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। দলের রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ৫ বিধায়কও।
এদিকে, মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটের ওপর নির্ভর করে লোকসভা নির্বাচনে যে ফল দেখেছিল পদ্ম শিবির। কিন্তু নতুন রাজ্য ও জেলা কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের জায়গা না দেওয়ায় ভীষণভাবে বিরক্ত শান্তনু ঠাকুর। মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নিজের ক্ষোভের কথা জানাতেও প্রস্তুত। তবে এখনও পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
তবে বিজেপিরও অপর একটা অংশ বলছে, “জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর যদি নজর রাখা যায়, তাহলে সুস্পষ্টভাবে দুটি ভাগ করা যায়। প্রথম ছ’মাস বিজেপির জন্য ছিল জোয়ারের সময়। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ভাঁটার টান শুরু হয়। বিজেপি থেকে তথাকথিত নেতানেত্রীরা তৃণমূলে যেতে শুরু করেন। এটা একটা পরিস্থিতি। দ্বিতীয় হল হঠাৎ করেই কয়েকজন বিধায়কের সংগঠনের সঙ্গে সংযুক্তি নিয়ে অসন্তোষের কথা বলেছেন। সংগঠন ঢেলে সাজাতে গেলে বড় পার্টিতে, তাতে অসন্তোষ তৈরি হয়। এতে অনেকের খারাপ লাগতেই পারে। এগুলোকে সঙ্গে নিয়েই চলতে হবে। এগুলো সাময়িক। এগুলো সাময়িক ক্রুটি বিচ্যুতির বিষয়। তবে দলের সে ক্ষমতা আছে, এগুলোর মোকাবিলা করে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বার করবে।”
এসবের মধ্যেই একটা চাঞ্চল্যকর ঘটনা। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে লোকাল ট্রেনের কামরায়। বনগাঁ থেকে শিয়ালদায় আসা লোকাল ট্রেনের কামরার গায়ে একাধিক পোস্টার ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অমিতাভবাবুর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও গরু পাচার-সহ একাধিক অভিযোগ তুলে বিজেপি থেকে অপসারণের দাবিতে পোস্টার পড়েছে। পোস্টারে তাঁকে গ্রেফতার করার দাবিও করা হয়েছে। এ নিয়ে অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি।