কলকাতা: বড়দিন কেটেছে। শক্রবার বর্ষশেষের রাত। কদিন ধরেই পার্কস্ট্রিট চত্বর জুড়ে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বের বালাই ভুলে উল্লাসে মাততে দেখা গিয়েছে কলকাতাবাসীকে। ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ। বাড়ছে উদ্বেগ। উদ্বিগ্ন স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও। বর্ষবরণের রাতে কী হবে, প্রশ্ন সেটাই। সেই দিনও কি মাস্ক না পরে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঘুরে বেড়াবেন শহরবাসী? কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের হাতে যে তথ্য এসেছে, তা খুবই মারাত্মক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আপাতত কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর দাইয়াই
♦ ৩ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জোনের ভাবনা
♦ প্রয়োজনে লোকাল ট্রেন কমানোর নির্দেশ
♦ স্কুল কলেজগুলির পরিস্থিতি রিভিউ করা হচ্ছে। এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য,স্কুলগুলিতে ইতিমধ্যেই শুরু হচ্ছে টিকাকরণ কর্মসূচি। ১ ও ২ জানুয়ারি স্কুল পরিদর্শনে যাবেন এক্সিকিউটিভ অফিসার। কলকাতায় ১৫-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ শুরু ৩ জানুয়ারি। প্রথম দিন কলকাতার ১৬ টি বরোর ১৬ স্কুলে টিকাকরণ।
♦ প্রয়োজনে ফের ৫০ শতাংশ কর্মীর ওয়ার্ক ফর্ম হোমের পরিকল্পনা।
♦ বিমান অবতরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসতে চলেছে রাজ্য সরকার। বৈঠকে থাকবেন কলকাতা বিমানবন্দরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা। থাকবেন মুখ্যসচিবও।
১৭৭ দিন পর হাজার পার করেছে করোনা পজিটিভের সংখ্যা। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কলকাতা ও শহরতলির। বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আর গা ছাড়া মনোভাব দেখানোর কোনও জায়গা নেই, এমনটাই বলছেন স্বাস্থ্য় দফতরের অধিকর্তারা। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা প্রতিদিনের তথ্য খতিয়ে দেখে অভ্যন্তরিণ বিশ্লেষণ করেছেন। জেলাগুলিকে ইতিমধ্যেই তৃতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তারা। দৈনিক করোনা বুলেটিনে যে তথ্য সামনে আসছে, তার থেকেই পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর বলে দাবি করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ভয় দেখানোর জন্য নয়, আতঙ্কিত করার জন্য নয়। কিন্তু বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে, যা সচেতন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
প্রথম তথ্য.. তৃতীয় ঢেউ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যে আছড়ে পড়তে চলেছে। এমনটাই আশঙ্কা করছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের বিশ্লেষণ, প্রত্যেকদিন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সংক্রমণ। সংক্রমণের গতি উর্ধ্বমুখী।
দ্বিতীয় তথ্য… কলকাতায় গোষ্ঠী সংক্রমণের ইঙ্গিত স্পষ্ট। পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের লোকাল স্যাম্পেলে ওমিক্রমণের সংক্রমণ স্পষ্ট। কলকাতায় টেস্ট ও পজিটিভিটি রেট সমান হারে বাড়ছে।
তৃতীয় তথ্য… প্রথম ঢেউয়ে অক্টোবরে পিক ছিল চার হাজার। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ২০-২৫ হাজার দৈনিক সংক্রমণ দেখেছিলাম। তৃতীয় ঢেউয়ে দৈনিক সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের স্পষ্ট কথা, ‘কোভিড নিয়ে কথা হোক’। সাধারণ মানুষের কাছে স্বাস্থ্য ভবনের বার্তা, ‘কোভিড নিয়ে কথা হোক…’ এখন যা পরিস্থিতিতে, তাতে পিকনিক, বর্ষবরণ আর কিচ্ছু নয়, শুধু কথা হোক কোভিড নিয়েই। হাতে সময় এক সপ্তাহ। দৈনিক যদি ৩০-৩৫ হাজার সংক্রমণ হয়, তাহলে প্রস্তুতি নেওয়ার মতো সময়ই নেই রাজ্যের হাতে। যুব্ধকালীন তৎপরতায় হাসপাতাল, সেফ হোমগুলিকে তৈরি থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য আধিকারিকদেরও প্রস্তুত থাকার বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য়ভবন। তৈরি হয়েছে ইন্টারন্যাল অ্যাসেসমেন্ট। তাতে বিভিন্ন গ্রুপে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের তরফে এই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে. প্রাইভেট ল্যাবগুলিতে নমুনা পরীক্ষার হার সরলরেখা বরাবর শীর্ষের দিকে এগোচ্ছে। সেদিক থেকে সরকারি ল্যাবগুলিতে নমুনা পরীক্ষা কার্যত হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। সেক্ষেত্রে সরকারি ল্যাবগুলিকে নমুনা পরীক্ষা দ্বিগুণ-তিন গুণ করতে বলা হয়েছে। আরটিপিসিআর করার কথা বলেছেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলায় তৃতীয় ঢেউ, দৈনিক সংক্রমণ ৩০-৩৫ হাজার! বিস্ফোরক তথ্য রাজ্যের কাছে