কলকাতা: অনেকেই মনে করছেন কোভিডের নয়া ভ্যারিয়েন্টে মৃদু উপসর্গ, মৃত্যুহার কম। তাই কোভিড বিধিকে অতটা গুরুত্ব দিতে হবে না। চার পাঁচদিনের জ্বর, সামান্য গলা ধরা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ তো মাঝেমধ্যেই করে। কিন্তু এই ‘ডাক্তারি’ই বিপদের তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে আমাদের। তেমনটাই মত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের বক্তব্য, পশ্চিমের দেশে বসে এই সিদ্ধান্তে আসা আর ভারতের মতো জনবহুল দেশে বসে এই সরলীকরণ মোটেই এক নয়। অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “এখানে মৃত্যুহার বা সিভিয়ার ডিজিজের হার যদি ১ শতাংশও হয় এবং দৈনিক ১৫ হাজার যদি আক্রান্ত হন তা হলে রোজ ১৫০ জনের উপরে মানুষ মারা যাবেন। এই সংখ্যাটা খুব কম নিশ্চয়ই নয়? আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এই সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমস্যাতেও পড়তে পারে। সুতরাং কম বিপদ বা মানুষ কম মারা যাচ্ছেন ভেবে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও জায়গা নেই। কারণ, আমাদের এখানে সংখ্যাটাই একটা বড় ফ্যাক্টর। আর এর ক্ষতি কতটা যে মানুষের বাড়িতে হতে তিনিই বুঝতে পারেন।”
চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মত, হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ বাড়লেই পরিস্থিতি ঘুরে যেতে পারে। কারণ, যে হারে সংক্রমণ হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে হাসপাতালে শয্যার চাহিদা হলে বর্তমান পরিকাঠামোয় তা জোগান দেওয়াই কার্যত অসম্ভব। সে কারণেই সরকার বা স্বাস্থ্য ভবন ইনস্টিটিউশনাল আইসোলেশনের কথা ভেবেছে। সেখানে প্রাথমিক কিছু ওষুধপত্র দেওয়া হবে দরকার পড়লে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হবে বা অন্যত্র রেফার করা হবে। কিন্তু মোদ্দা কথা মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সকলের হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়, ঠিকই। তবে যে পরিমাণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন তাতে নগন্য সংখ্যককেও যদি হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তা হলেও কিন্তু ত্রাহি ত্রাহি রব উঠবে।
এখনও স্পষ্ট নয় তৃতীয় ঢেউয়ে ওমিক্রনই প্রধান স্ট্রেন নাকি ডেল্টা। অনির্বাণ দলুই জানান, “এই মুহূর্তে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের যে রিপোর্ট তাতে ওমিক্রন হাতে গোনা। তার মানে ধরেই নিচ্ছি ডেল্টা, ডেল্টা প্লাস বা সমগোত্রীয় কোনও স্ট্রেন ভারতে কাজ করছে। এটা আগেও ছিল। প্রশ্ন উঠবে তা হলে এখন কেন ছড়াচ্ছে? কারণ একটাই, মানুষের কোভিড বিধি পালনে অনীহা।”
আরও একটা বিষয় অনেকের মনেই রয়েছে, জিনোম সিকোয়েন্সিং ছাড়া কী ভাবে স্বাস্থ্যভবন বুঝছে এই প্রবল সংক্রমণ ওমিক্রনের নয়। এ বিষয়ে অনির্বাণ দলুইয়ের প্রতিক্রিয়া, “আমরা স্যাম্পেলিং করছি। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানের এটাই একটা নিয়ম। যা চলছে তার আপাতত আভাস এই স্যাম্পেলিংয়ের মাধ্যমেই হয়।”
আরও পড়ুন: Local Train Timing: ৭টা নয়, শেষ লোকাল ট্রেন ছাড়বে রাত ১০টায়, নয়া নির্দেশিকা নবান্নের