BGBS 2023: মহুয়া বিতর্কের মধ্যেই আদানিকে আমন্ত্রণ, তৃণমূলের দ্বিচারিতা না রাজধর্ম পালন?
বিতর্কে মহুয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দল। অতি সম্প্রতি তাঁকে নদিয়া জেলার সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানোয়, তৃণমূল সংরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
কলকাতা: মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) থেকে শুরু হল বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ২০২৩। এই বাণিজ্য সম্মেলনে বিভিন্ন শিল্প গোষ্ঠীর সঙ্গে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আদানী গোষ্ঠীকেও। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সংসদে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সম্প্রতি, শিল্পপতি দর্শন হিরানন্দানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই বিতর্কে মহুয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে দল। অতি সম্প্রতি তাঁকে নদিয়া জেলার সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য সম্মেলনে আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানোয়, তৃণমূল সংরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা।
এর আগে, বিরোধীরা বারবারই বাণিজ্য সম্মেলনে আসা প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয় না বলে, সমালোচনা করেছেন। তবে, এইবার তারা সরকারকে নিশানা করেছেন আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে। আদানি প্রসঙ্গেও তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপিকে এক সুতোয় বাঁধতে চেয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, “মোদীও আদানির কথা ভাবছেন, এখন দিদিও আদানির কথা ভাবছেন। আদানি নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য তাঁর দলের সাংসদকে তাড়িয়ে দেওযার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আবার তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বই সেই আদানির হয়ে সাফাই গাইঠে দিল্লি গিয়ে।” অন্যদিকে বিজেপি নেতা শমিক ভট্টাচার্য বলেছেন, “আদানি গোষ্ঠীকে নিয়মিত আক্রমণ করেন মহম্মদ সেলিম, সীতারাম ইয়েচুরি, রাহুল গন্ধীরা। তাঁদের সঙ্গে ডুগি-তবলা নিয়ে নেমেছিলেন মহুয়া মৈত্রও। এখন সীতারাম ইয়েচুরিদের পরামর্শে তাঁকে জেলা সভাপতি করা হয়েছে। আবার অন্যদিকে আদানিকেও আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তৃণমূল সরকার। এটাই তৃণমূলের দ্বিচারিতার রাজনীতি।”
তবে, সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজধর্ম পালনের স্বার্থে। এর সঙ্গে রাজনীতিকে জড়াতে চায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশি পাঁজা বলেছেন, “তাজপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছে আদানি গোষ্ঠী। তাজপুরের সেই প্রকল্পের কাজ এখনও শুরু হয়নি। আমরা আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তাদের প্রতিনিধি এলে, সেই প্রকল্পের বিষয়ে আমরা জানতে চাইব। রাজ্যের উন্নয়নের কথা ভেবেই আদানি গোষ্ঠীকে ডাকা হয়েছে। আমরা কখনই রাজনীতিকে উন্নয়নের আগে রাখব না।” অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেছেন, “আদানি একজন ব্যবসায়ী। আমরা তাঁকে বিনিয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এর মানে এই নয় যে, তাঁর সঙ্গে সক্ষতা গড়ে তৃণমূল নেতারা মোদীর মতো তাঁর প্রাইভেট চার্টার প্লেনে করে ঘুরবেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে আদানিকে ব্যবহার করা, ভারতবর্ষকে আদানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া আর ব্যবসায়িক স্বার্থে কোনও রাজ্যে আদানিকে বিনিয়োগ করার সুযোগ করে দেওয়া এক জিনিস নয়।”
রাজধর্ম পালন করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, আদানি গোষ্ঠী কি বিষয়টিকে পেশাদারি দৃষ্টিতে দেখতে পারবে? মহুয়া বিতর্কের পর, বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন আদানি গোষ্ঠীর কোনও প্রতিনিধি? আদানি গোষ্ঠীকে আমন্ত্রণ জানানো দ্বিচারিতা না রাজধর্ম, সেই প্রশ্ন ছাপিয়ে, সকলে এখন এই উত্তর খুঁজছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আদানি গোষ্ঠী যদি যোগ না দেয়, তাহলে, সেই ঘটনা জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতেও তাৎপর্যপূর্ণ হবে।