কলকাতা: খাটের ওপর চিৎ হয়ে পড়ে শরীরটা। গলায় একটা ক্ষত। দেহে নেই কোনও সার। বিছানার চাদর টান টান করে পাতা। তবে কম্বল ছিল খোলা। পাশে টেবিলের ওপর ছিল খাবারে প্লেট, সিগারেটের প্যাকেট! মোবাইলে টাওয়ার লোকেট করে যতক্ষণে অপহৃত ব্যবসায়ীর খোঁজে শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোডের গেস্ট হাউজ়ে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, ততক্ষণে আততায়ী সেরেছে তার ‘অপারেশন’। একে মেলেনি মুক্তিপণের টাকা, উল্টে রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিশে। সম্ভবত ভয় পেয়েই আততায়ী খুন করেছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে। গড়িয়াহাটের জোড়া খুনের পর শহরের বুকে ঘটে গেল আরও এক বড় ‘ক্রাইম’! সোমবার রাতে এলগিন রোডের গেস্ট হাউজ় থেকে মিলল ভবানীপুরের অপহৃত ব্যবসায়ী শান্তিলাল বৈদ্যের দেহ। পরিবার সূত্রে খবর, সোমবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ব্যবসায়ী। এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন এসেছিল সোমবারই। তারপরই দেরি না করে পরিবার যোগাযোর করে থানায়। পুলিশ জানাচ্ছে, গলায় মিলেছে দাগ। শ্বাসরোধ করেই খুন বলে প্রাথমিক অনুমান তদন্তকারীদের। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে।
যে গেস্ট হাউজে ওই ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধার হয়েছে, তার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে। গেস্ট হাউজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। গেস্টদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, ওই গেস্ট হাউজে ব্যবসায়ীর সঙ্গে আর কেউ ঢুকেছিলেন কিনা। আর কাউকে পরে ঢুুকতে দেখা গিয়েছিল কিনা, তা জানতে গেস্ট হাউজ কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলবে পুলিশ। এই খুনের মোটিভ কী? কোনও রকম ব্যবসায়ীক শত্রুতা নাকি অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পরিবারের কাছে সোমবারই একটি ফোন আসে। তাতে অপহরণের কথা জানিয়ে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। এরপরই লালবাজারে গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিবার। মোবাইলের টাওয়ার লোকেট করে ওই ব্যবসায়ীকে তাঁকে গেস্ট হাউজে খুঁজে পান। কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ভবানীপুরে একটি খুনের মামলা রুজু হয়েছে। লালবাজারের হোমিসাইড শাখা ও গুন্ডা দমন শাখার তদন্তকারীরা যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ভবানীপুরের মতো জায়গায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে খুনের ঘটনায় পুলিশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
শম্ভুনাথ পণ্ডিত রোডের ওই গেস্ট হাউজের তৃতীয় তলায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সেই গেস্ট হাউজ়ের চতুর্দিকে এখন কড়া নিরাপত্তা। প্রাক্তন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এত প্রাক মুহূর্তে এ সব কিছুই বলা যাবে না। কজ় অফ ডেথটা আগে জানতে হবে। এটা ম্যাজিস্ট্রিয়াল পর্যায়ের একটা ইনভেস্টিগেশন। তারপর ভিডিয়ো ফটোগ্রাফি হবে। ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে যে কীভাবে ওঁকে মারা হল। ওঁর মোবাইলের কললিস্টটাও খতিয়ে দেখতে হবে। কাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা কোথাকার বাসিন্দা, তারা আদতে কারা, পূর্ব পরিচিত কিনা. পুঙ্খানুপুঙ্খ কী খবর ছিল, সেগুলির সব ফোনের মাধ্যেই তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে একাধিক মোবাইল থাকলে, সেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।”
আরও পড়ুন: Post Poll Violence: নগদ পুরস্কারের ঘোষণাতেই বাজিমাৎ! অভিজিৎ খুনে সিবিআইয়ের হাতে পাকড়াও আরও ২