কলকাতা: করোনা, স্বাস্থ্য বিধি, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় গত দেড় বছর ধরে জনজীবন কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের জীবনে বেড়েছে সাইবার নির্ভরতা। মুঠোতেই গোটা বিশ্ব বন্দি। কিন্তু প্রযুক্তির যেমন ভাল দিক আছে, তেমন যে খারাপটাও নেহাত কম নয়। প্রতি নিয়ত শহরে ঘটে চলা সাইবার ক্রাইম সে তত্ত্বেই সিলমোহর দিচ্ছে। সাইবার প্রতারণায় ফের একজনকে গ্রেফতার করল বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। ধৃতের নাম ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। মারাত্মক অভিযোগ ওই যুবকের বিরুদ্ধে। দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে বরাত পাইয়ে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগে এই গ্রেফতারি।
রাজারহাটের বাসিন্দা ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরের এক ঘটনায় প্রায় দু’বছর পর গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক ব্যক্তির মেয়েকে শহরের নামি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবেন বলে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। কিন্তু পরে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি। বদলে ওই ব্যক্তিকে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে নার্সারির বরাত পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন, এমনটাই অভিযোগ। বদলে কয়েক কোটি টাকাও নেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তরুণ কুমার নামে এক নার্সারি ব্যবসায়ী বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মূল ঘটনা তারও এক বছর আগের, ২০১৮ সালের। তরুণ কুমারের অভিযোগ, ২০১৮ সালে তাঁর মেয়েকে শহরের নামি এক বেসরকারি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। ওই নার্সারি ব্যবসায়ী সেই টাকা দিয়েও দেন বলে দাবি। কিন্তু পরে তাঁর মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি অভিযুক্ত।
এদিকে সেই টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করছিলেন। এরই মধ্যে অভিযুক্ত যুবক তরুণ কুমারকে বলেন দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটিতে নার্সারির জিনিসের সরবরাহ করার সুযোগ পাইয়ে দেবেন তিনি। অভিযোগ, এর বদলে ৬ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেন বছর ৪১-এর ধ্রুব। ইমেল মারফৎ দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক ভুয়ো চিঠিও দেন তরুণকে। ‘১৯ সালে তরুণ কুমারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় তদন্ত। বিধান নগর সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি।
অবশেষে শুক্রবার রাতে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর রাজারহাট মেইন রোডের নারায়ণপুকুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। শনিবার ধৃতকে বিধাননগর মহকুমা আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে চাইবে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, সরকারি কাগজপত্র জাল করে টাকা নেওয়া-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউন এবং মহামারী হল সাইবার ক্রাইমের স্বর্গরাজ্য। অতিমারির জেরে মানুষের ঘর থেকে বেরোনোর উপায় নেই। টাকা-পয়সা লেনদেন থেকে প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্যনির্ভর কাজও আন্তঃর্জালেই সারতে চাইছেন মানুষ। তাতে বাড়ছে অপরাধের প্রবণতাও। আরও পড়ুন: সরকারের কাছে বকেয়া কয়েক কোটি টাকা, মন্ত্রীকে চিঠি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের