কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মেয়রকে বলেছেন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে। পার্কিং ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার এমন দাবি করেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নাকি জানতেন না। অনুমতি না নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুর কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, পুর কর্তৃপক্ষ যদি কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চায়, তা কি সত্যিই মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো বাধ্যতামূলক? সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দ না হলে তিনি প্রত্যাহারের নির্দেশ দিতে পারেন? কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য কিন্তু স্পষ্ট জানাচ্ছেন, পুরসভার সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারে না সরকার। যদি করে থাকে, তাতে সংবিধান বা অধিকার লঙ্ঘন হয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কিং ফি নিয়ে এক অভূতপূর্ব তরজা সামনে আসে। কুণাল ঘোষের মন্তব্যের পর ফিরহাদ দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার কোনও নির্দেশ দেয়নি। এরই মধ্যে আবার তৃণমূলের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পুরনিগমকে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য ধন্যবাদ জানানো হল। অন্যদিকে আবার পুরনিগমের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে বর্ধিত পার্কিং ফি।
দিনভর এই পার্কিং ফি বৃত্তান্ত প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান বাম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা ফিরহাদ হাকিম, কেউই আইনি অধিকার সম্পর্কে অবগত নন। সংবিধান অনুযায়ী, পুরসভা একটি তৃতীয় স্তরের সরকার। তার নিজস্ব যে অধিকার আইনে দেওয়া আছে, তাতে পুরসভা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবে। পুরসভার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার কোনও অধিকার রাজ্য সরকারের নেই।’
প্রাক্তন মেয়রের দাবি, পার্কিং ফি পুরসভার এক্তিয়ারভুক্ত একটি বিষয়। তাই পার্কিং ফি বাড়বে না কমবে, তা নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হলেও রাজ্য সরকার কখনই নির্দেশ দিতে পারে না। বিকাশ ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘পুরসভা সরকারের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, বলে দিতে পারে, এটা তার এক্তিয়ার-ভুক্ত নয়।’ এই প্রসঙ্গে অধিকারের বিষয়টা বোঝাতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন বিকাশ। তিনি বলেন, ‘ধরুন যদি নরেন্দ্র মোদী বলেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, পথশ্রী, রূপশ্রী সব প্রকল্প বেআইনি। তা কি রাজ্য সরকার মেনে নেবেন? মেনে নেবেন না, কারণ রাজ্য সরকার সংবিধান সম্মতভাবে একটি দ্বিতীয় স্তরের সরকার।’ তাঁর দাবি, এই বিষয়ে নির্দেশ দিলে পুরসভার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়। এটা সংবিধান-বিরোধী কাজ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই বিষয়ে কলকাতা পুরনিগমের আর এক প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কলকাতা কর্পোরেশন বলুন, রাজ্যের সরকারই বলুন। কোনও মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বা অন্য যে কোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বুঝতে হবে যে এর ছাড়পত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে নিতে হবে। দলের মাধ্যমে নিতে হবে বা সরাসরি নিতে হবে। সেটা নেওয়া হয়েছে কি না আমি জানি না। কিন্তু, যখন এই সিদ্ধান্ত দল হিসাবে নিয়েছে, দল জানিয়েছে তখন এর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য, দলীয় কোন্দলের কোনও অবকাশ নেই।”