কলকাতা: তিনি দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। তাঁর প্রতাপে বীরভূমে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়। বারবার বিতর্কিত মন্তব্য করে তিনি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন। না তিনি সাংসদ না তিনি রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী, কিন্তু তাসত্ত্বেও তিনিই বীরভূমের শেষ কথা, তিনি জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। গরু পাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) জেরা করতে চেয়ে তাঁকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অতীতে চারবার তলব করলেও শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে পঞ্চমবারের জন্য তলব করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। মনে করা হচ্ছিল, এইবার অন্তত তিনি গোয়েন্দাদের সামনে হাজির হবেন। সকাল থেকে পরিস্থিতি সেই দিকে ইঙ্গিত করছিল। নিজাম প্যালেসের সিবিআই দফতরে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত, চিনার পার্কের বাড়ি থেকে রওনাও দিয়েছিলেন অনুব্রত। কিন্তু নাটকীয়ভাবে মা উড়ালপুল থেকে অনুব্রত মণ্ডলের গাড়ি রাজ্যের পাঁচতারা সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমের (SSKM Hospital) দিকে ঘুরে যায়। অনুব্রতর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে দাবি করা হয়েছিল গতকাল রাত থেকে তাঁর বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হচ্ছিল সেই কারণেই তিনি হাসপাতালে গিয়েছেন।
তবে হাসপাতালে গিয় কেষ্টর আজব দাবি শুনে মাথায় হাত এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালে পৌঁছেই বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি দাবি করেন, হাসপাতালে ভর্তি হলে তাঁকে উডবার্ন ব্লকের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনেই থাকতে দিতে হবে। অনুব্রতের এই দাবিতে দিশেহারা অবস্থা এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের। সাধারণত ব্রিটিশ আমলে তৈরি হাসাপাতালের উডবার্ন ব্লকে ভিআইপি রোগীদের চিকিৎসা হয়। অনুব্রত যে সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনের দাবি করেছেন, তাঁরও একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। শোনা যায় ব্রিটিশরা ১৩ সংখ্যাটিকে অপয়া বলে মনে করতেন। তাই হাসপাতাল নির্মাণের সময় ১২ নম্বরের পরবর্তী কেবিনটিকে সাড়ে ১২ নম্বর দেওয়া হয়। উউবার্ন ব্লকে ১৩ নম্বর কেবিন নেই, সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনের পরেরটি ১৪ নম্বর কেবিন। ব্রিটিশ আমলে বড়লাট বা গভর্নরদের চিকিৎসা সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনেই হত।
আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকে প্রথাগতভাবে এসএসকেএমের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনটি ভিভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ। দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি যখন কলকাতা সফরে আসেন, তখন ওই কেবিনটি তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে। তাছাড়াও সাধারণভাবে ওই কেবিনটি মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপালের জন্য বরাদ্দ থাকে। কেবিনটির বিশেষত্ব হিসেবে জানা গিয়েছে, এই কেবিনটি অনেকেটাই লোক চক্ষুর আড়ালে এবং সেখানে পৌঁছানোও অনেকটাই কঠিন। সেই কারণেই কী ওই বিশেষ কেবিনে থাকার আবদার জানিয়েছন অনুব্রত মণ্ডল? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।