Bird Flu: কীভাবে মানব শরীরে পৌঁছয় বার্ড ফ্লু? বাংলার শিশুরা সত্যি আক্রান্ত হচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা

Bird Flu: সাধারণভাবে যারা মুরগি প্রতিপালন করেন, তারা আক্রান্ত মুরগির ক্লোজ কনট্যাক্ট বা সংস্পর্শে এলেই সংক্রমণ ছড়ায়। যদিও পশুদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল।

Bird Flu: কীভাবে মানব শরীরে পৌঁছয় বার্ড ফ্লু? বাংলার শিশুরা সত্যি আক্রান্ত হচ্ছে? কী বলছেন চিকিৎসকরা
কীভাবে ছড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু?Image Credit source: Pixabay
Follow Us:
| Updated on: Jul 24, 2024 | 3:30 PM

কলকাতা: বর্ষাকাল মানেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া। এটাই যেন চেনা চিত্র হয়ে উঠেছে কলকাতা তথা গোটা রাজ্যের। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অন্য এক সংক্রমণ। জ্বর, সর্দি-কাশি, গা-হাত পা ব্যথা। সাধারণ ফ্লুয়ের মতোই উপসর্গ। কিন্তু গোপনেই থাবা বসাচ্ছে অন্য এক রোগ। বার্ড ফ্লু। রাজ্যে বাড়ছে বার্ড ফ্লু-র প্রকোপ। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, রাজ্যে ছয়দিনের ব্যবধানে নয় শিশুর বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছে।

জানা গিয়েছে, বিগত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যে ৯ শিশু বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়েছে, তাঁরা মালদহ, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা। এন্টালি, হালতুর ২ শিশুও আক্রান্ত হয়েছে। সাধারণ সোয়াব পরীক্ষাতেই বার্ড ফ্লু-র অস্তিত্ব মিলেছে। কিন্তু বার্ড ফ্লু তো মুরগির হয়। তাহলে মানবদেহে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস?  

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জাই সাধারণভাবে বার্ড ফ্লু নামে পরিচিত। H5N1 হল বার্ড ফ্লু-র সবথেকে সাধারণ রূপ। এছাড়াও বার্ড ফ্লুয়ের নানা প্রজাতি রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হত, পাখি থেকে মানবদেহে ছড়ায় না এই ভাইরাস। ১৯৯৭ সালে প্রথমবার মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া যায়। ভারতে আগে যে ধরনের বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়েছিল, তার নাম H5N1 এবং H7N9।

কীভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?

রাজ্য়ে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ডঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার বলেন, “প্রথমেই জানা দরকার এটি বার্ড ফ্লু কি না। যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ সংক্রমণ কীভাবে হচ্ছে, তা বলা যায় না। জিনোম সিকোয়েন্স, আইসোলেশনের প্রয়োজন সংক্রমণ নিশ্চিত করার জন্য। এই ভাইরাস মানবদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ হচ্ছে নাকি পাখি থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, সেই তথ্যও জানা দরকার। তারপরই সংক্রমণের সূত্র কী, সে সম্পর্কে বলা সম্ভব।”

সাধারণভাবে যারা মুরগি প্রতিপালন করেন, তারা আক্রান্ত মুরগির ক্লোজ কনট্যাক্ট বা সংস্পর্শে এলেই সংক্রমণ ছড়ায়। যদিও পশুদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। করোনা ভাইরাসের যেমন মিউটেট বা অভিযোজিত হয়ে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছিল, বার্ড ফ্লু-র ভাইরাসের ধর্মও একই। ২০০৯ সালে প্রথম মানবদেহে H1N1 ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মেলে।

ডঃ সিদ্ধার্থ জোয়ারদার এ বিষয়ে বলেন, “বর্তমানে H3N2, H1N1 , ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ- র সংক্রমণ হচ্ছে। শিশুদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। এর কারণ হল ১৪ বছর বয়সের আগে শরীরে অ্যান্টিবডি, যা সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ করে, তা সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয় না।

তিনি আরও বলেন, “কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনামে মানবদেহে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের যে খবর মিলেছিল, সেখানে মুরগি প্রতিপালন করা থেকেই ভাইরাস ছড়িয়েছিল। মুরগির অত্যন্ত কাছে থাকায়, ড্রপলেট, খাবার, থুতু বা লালা থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। এক্ষেত্রে জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন হয়েছিল। এক্ষেত্রে যদি রাজ্যের শিশুরা সত্যিই বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হয়, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। এক্ষেত্রে সংক্রমণের উৎস জানা দরকার।”

শিশু বিশেষজ্ঞ ডঃ সুমন পোদ্দারও বলেছেন, “গত পাঁচ-সাতদিনের মধ্যে ঘরে ঘরে বাচ্চাদের জ্বর-কাশি-সর্দি-গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। যে বাড়িত ঢুকছি সেই বাড়ির কোনও না কোনও সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার মারাত্মক কাশি হচ্ছে। সেটা কমতে কষ্ট হচ্ছে। গলায় প্রচণ্ড ব্যথা। যাঁরা একটু বড় বাচ্চা তাঁরা প্রকাশ করতে পারছে। কারও নিউমোনিয়া হচ্ছে।”

রোগের উপসর্গ-

বার্ড ফ্লুয়ের উপসর্গও আর পাঁচটা সংক্রমণের মতোই। আক্রান্তদের মূল উপসর্গ হল জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পেট ব্যথা, গা-হাত পা ব্যথা। অনেক সময় চোখের সংক্রমণও হতে পারে। এই সংক্রমণ ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৫ বছর আগে, ২০১৯ সালে বার্ড ফ্লু-র ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছিল। চলতি বছরেরই জুন মাসে ৪ বছরের এক শিশুর শরীরে মিলেছিল H9N2 বার্ড ফ্লু ভাইরাস। তিন মাস বাদে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে এই তথ্য জানা যায়। কলকাতায় এসেই শিশুর শরীরে ভাইরাস বাসা বেঁধেছিল। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছনোর পর জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। নমুনা পরীক্ষা করা হলে ‘বার্ড ফ্লু’ ভাইরাস ধরা পড়ে। প্রায় তিন মাস পরে শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠে।