কলকাতা: লুচি-আলুরদমের পাত থেকে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের (Sabyasachi Dutta)। সেটা ছিল ২০১৯ সাল। তিন বছরেই ছেদ পড়ল সে সম্পর্কে। যাঁকে লুচি আলুর দম খাইয়ে ‘অতিথি সেবা’ করেছিলেন, সেই মুকুল রায়ও ‘ঘরে’ ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার তৃণমূলে ফিরলেন সব্যসাচী দত্তও। লোকসভা বা বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন যাঁরা, একে একে ‘ঘর ওয়াপসি’ হচ্ছে। তবে কি বঙ্গে বিজেপি নড়বড়ে হতে শুরু করল? এ সব যুক্তি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, যাঁরা দলটাকে তৈরি করেছেন, তাঁরা ঠিক জায়গায় আছেন। একের পর এক এসেছিলেন, একের পর এক যাচ্ছে। এতে কিছুই আসে যায় না।
শুক্রবার ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, “যত তাড়াতাড়ি চলে যান, ততই ভাল হয়। এমন কিছু লোকজন আছেন, তাঁরা কোন দিকে আছেন বোঝা যাচ্ছে না। তাঁরা যত তাড়াতাড়ি যাবেন, আমরা গুছিয়ে কাজ করতে পারব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সাফ হয়ে যাবে।”
একই সঙ্গে সব্যসাচী দত্ত প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্মান দেওয়া হয়েছে। দলের তরফে কোনও খামতি রাখা হয়নি। কাজের সুযোগ, টিকিট দেওয়া হয়েছে। ওনারা ঠিক করতে পারছেন না কোন দিকে যাবেন। তবে যাঁরা খেটে পার্টিটাকে দাঁড় করিয়েছিলেন, তাঁরা ঠিক জায়গাতেই আছেন। একের পর এক এসেছিলেন, একের পর এক যাচ্ছেন। তাঁদের জন্য রাজনীতিতে প্রভাব পড়ে না।”
২০১৯ সালের এক মার্চে প্রথম বিতর্কের সূত্রপাত সব্যসাচী দত্তকে নিয়ে। মুকুল রায় (তখন বিজেপি নেতা) হঠাৎই একদিন হাজির হলেন সব্যসাচী দত্তের সল্টলেকের বাড়িতে। লুচি-আলুরদম সহযোগে অতিথি সেবা করলেন ‘সব্য’। এই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে চরম ক্ষোভ বিক্ষোভ তৈরি হয়। প্রথমে অবশ্য বিজেপি যোগের কথা অস্বীকার করেছিলেন সব্যসাচী। শুধু বলেছিলেন, রাতে একটা ফোন এসেছিল। ‘আমি দাদা বলছি। মুকুল দা। তোদের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না। তোর বাড়িতে আসছি’। এরপরই মুকুলদা লুচি আলুরদম খেতে চেয়েছিলেন। কেউ খেতে চাইলে তাঁকে কি না বলে কেউ। লুচি আলুরদম তো কারও বাড়িতে তৈরি থাকে না। তা বানাতে যেটুকু সময় লেগেছে, সেই সময়টুকু যা কথা হয়েছে। একেবারেই সৌজন্য সাক্ষাৎ।”
এরপর সে বছরই জুন মাসে সল্টলেকে এক লোকনাথ পুজোর অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসে ভোগও খান মুকুল-সব্যসাচী। কয়েকদিনের মধ্যেই পাকাপাকি ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র। বিজেপি তাঁকে পদ, টিকিট সত্যিই সমস্ত কিছু দিয়েছিল। যদিও কোনওটাতেই বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি সব্যসাচী দত্ত। একুশের ভোটে হারার পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর। জোরাল হচ্ছিল তৃণমূল যোগের সম্ভাবনা।
অবশেষে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধায়ক পদে শপথগ্রহণের দিনই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে নেন সব্যসাচী দত্ত। যদিও সূত্রের খবর, তাঁর এই ঘরে ফেরা মোটেই ভাল নজরে দেখছেন না দলের আরও দুই বিধায়ক সুজিত বসু ও তাপস চট্টোপাধ্যায়। যাঁরা উপনগরীর রাজনীতিতে সব্যসাচী-বিরোধী হিসাবেই পরিচিত।
আরও পড়ুন: Durgapur: বাজারে সোনার চেন, আংটি পরে এসেছেন কেন? বলেই ‘পুলিশ’ যা ঘটালেন! কপালে হাত ব্যক্তির