কলকাতা: কিছুদিন আগেই লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের পর সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) কোভিড নিয়ন্ত্রণে যে সব পদক্ষেপের কথা বলেছেন, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। নিজের সংসদীয় এলাকাকে কার্যত মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। সেইমতো ডায়মন্ড হারবার মডেল (Diamond Harbor Model) চালুও হয়। গত ১২ জানুয়ারি টুইট করে খোদ অভিষেক জানান, তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে একদিনে ৫০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। কমেছে পজিটিভিটি রেটও। আর এই নিয়ে ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে একের পর এক তোপ দাগছেন বিরোধীরা।
দিলীপের প্রতিক্রিয়া
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) বলেন, “ডায়মন্ড হারবার টা কি গোটা পশ্চিমবঙ্গ! কলকাতা! কলকাতায় এত সংক্রমণ, সেখানে সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ডায়মন্ড হারবার কেন! সবই সাধারণ মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা। ক্ষমতা থাকলে কলকাতায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করে দেখান।”
কেবল দিলীপই নন, ডায়মন্ড হারবার মডেলের বিরোধিতা করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায়, “ডায়মন্ড হারবার মডেল কার মাথার বুদ্ধি! এতবড় একটা কাজ হচ্ছে আর মুখ্যমন্ত্রী তাতে চুপ কেন! তিনি এখনও বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। কেন ডায়মন্ড হারবার মডেল প্রত্যেক জেলায় হবে না?” বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ভাইপো করছেন, পিসি কেন নয়!’
অভিষেকের এই ডায়মন্ড হারবার মডেল নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় খোদ দলের অন্দরেও, যখন দলীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি তো ভাইপো নই, তাই অমন মডেল পাব না। তাহলে আমিও পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিতাম।” দলের সাংসদের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরের বিরোধ অনেক দূর গড়ায়। যা নিয়ে এখনও বেশ অস্বস্তিতে শাসক শিবির।
ডায়মন্ড হারবার মডেলটি ঠিক কী?
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ডায়মন্ডহারবার বঙ্গের কাছে একটি মডেল হয়ে উঠবে, সেই উপলক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোভিড পরীক্ষার পাশাপাশি, চালু হয়েছে ‘ডক্টর অন হুইলস’ কর্মসূচি। ব্লকে ব্লকে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। প্রধানত বয়স্ক, অসুস্থ, টেলি মেডিসিনের পরিষেবা নিতে অপারগ এমন মানুষদেরই পরিষেবা দিতে এই উদ্যোগ। কেউ কোভিডে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন কি না তাও দেখা হচ্ছে এই কর্মসূচির মাধ্যমে।
পাশাপাশি, নিজেদের সংসদীয় এলাকাতে সবরকমের মেলা-জমায়েত সব কিছুতেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন অভিষেক। গত বুধবার, অভিষেক টুইট করে জানান, একদিনে ৫০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাঁর সংসদীয় এলাকায়। অভিষেক দাবি করেছেন, রাজ্যের সব কটি সংসদীয় এলাকার মধ্যে পজিটিভিটি রেট সর্বনিম্ন ডায়মন্ড হারবারে। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমানে ডায়মন্ড হারবারে সংক্রমণের পজিটিভিটি রেট ২.১৬ শতাংশ। গত সাতদিনে রাজ্যের সব লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন বলে দাবি করেছেন সাংসদ।
অভিষেক আরও জানিয়েছেন, ডায়মন্ড হারবারকে কোভিড-মুক্ত করাই তৃণমূল সাংসদের লক্ষ্য। প্রতিটি ওয়ার্ডে, প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে ঘোষণা করেছেন সাংসদ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই করোনার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। আগামী ২০ জানুয়ারি ফের বৈঠকে বসবেন অভিষেক।
আরও পড়ুন: Republic Day Tableau: ‘ট্যাবলো নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন’