কলকাতা: মোদী-মমতার রাজনৈতিক সম্পর্ককে ‘রহস্যজোট’। মোদী আর মমতা উভয়ের লক্ষ্যই আসলে এক। কারণ, দুজনেই কংগ্রেস মুক্ত ভারত চান। আবার মমতাকে দিয়েই কংগ্রেস বধ করতে চান মোদী। কয়েকদিন আগে এসবই লেখা হয় খোদ আরএসএস ঘনিষ্ঠ পত্রিকা ‘স্বস্তিকা’য়। “মোদী-মমতার রহস্য জোটে ফেঁসে’ সব দল, ভাঙন বিরোধী শিবিরে” এই শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয় রাজনৈতিক মহলই। আচমকা সেই পত্রিকার সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বিজেপি নেতা রন্তিদেব সেনগুপ্ত (Rantidev Sengupta)।
শুধু তাই নয়। এই প্রেক্ষিতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখলেন দীর্ঘ পোস্ট। সেটার ছত্রে ছত্রে আবার কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনার সুর! খোদ সঙ্ঘ পরিবারের এই নেতার এমন পোস্ট নিয়ে আলোড়ন রাজনৈতিক মহলে।
তাঁর দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টের একজায়গায় একুশের বিধানসভা ভোটের বিজেপি প্রার্থী রন্তিদেব লিখেছেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ব্যাঙ্ক ফেল করলে প্রত্যেক আমানতকারীকে পাঁচলাখ টাকা করে দেবেন সরকার বাহাদুর। এতে অনেকে ধন্য ধন্য করছেন। বলছেন সরকার বাহাদুরের দয়ার শরীর। আমরা কিন্তু তা মনে করছি না। সরকার বাহাদুরকে বাহবা দিতেও পারছি না। সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর পাঁচলাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়াকে একটি নির্মম কৌতুকের বিষয় বলেই মনে করছি আমরা।” (বানান ও বাক্যগঠন অপরিবর্তিত)।
আবার এখানেই থামেননি তিনি। মোদী বিরোধিতার সুর তুলে রন্তিদেব আরেক জায়গায় আদানী-আম্বানীর মতো শিল্পপতিদের কটাক্ষ করেছেন। দেশের ধনীতম যে শিল্পপতিদের সঙ্গে মোদী সরকারের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন করে, সমালোচনা করে, রন্তিদেবের পোস্টেও তেমনই সুর! তিনি লিখেছেন, “আমরা এই পাঁচ পাবলিক ব্যাঙ্কে যে টাকাটুকু জমিয়েছি সেটা যদি চোট হয়ে যায় তাহলে কী হবে? আমাদের ছোট ছোট সুখ দুঃখ দিয়ে গড়া ওই ভারতটাও কি নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে না?”
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দিল্লিতেএক ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠান থেকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান ব্য়াঙ্ক ডুবলে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পাবেন আমানতকারীরা। এই নিয়মের আওতায় দেশের ৯৮ শতাংশ গ্রাহক উপকৃত হবেন। তবে তাঁর এই ঘোষণার পর সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, আমানতকারীদের আশার বাণী শোনালেও প্রধানমন্ত্রী যেন আশঙ্কা করছেন ব্যাঙ্ক ডুবলেও ডুবতে পারে।
এদিকে সেই ঘোষণার বিরোধিতা করে বিজেপি নেতা রন্তিদেব লিখেছেন, “সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়ার পর পাঁচলাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়াকে একটি নির্মম কৌতুকের বিষয় বলেই মনে করছি আমরা। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী এখন ব্যাঙ্ক ফেল করার আগাম একটি গাওনা গাইছেন কেন? আসলে সরকার বাহাদুর গা থেকে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। বেচে দেওয়ার এক ভয়াবহ খেলায় নেমেছেন তারা।”
আবার এই বিশাল পোস্টের শেষাংশে শ্লেষ আরও তীব্র। আরএসএসের মুখপত্রের সম্পাদকের পদ ছাড়া রন্তিদেব লিখেছেন, “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান অপরাধী। সরকার বাহাদুরের এই অন্যায় যদি আমরা মুখ বুজে মেনে নিই – তাহলে আমরাও সমান অপরাধী হয়ে থাকব। আমরা অপরাধী হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের, পাঁচ পাবলিকের সম্মিলিত প্রতিবাদ সরকার বাহাদুরকে বাধ্য করুক এই বেচে দেওয়ার খেলা বন্ধ করতে”।
উল্লেখ্য, একুশের ভোটে হাওড়া দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হয়েছিলেন রন্তিদেব সেনগুপ্ত। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে হাওড়া কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে লড়েছিলেন এই প্রাক্তন সাংবাদিক। সেবার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে হেরে যান। এবার তাঁকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করা হলে প্রথমে পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন রন্তিদেব। পরে অবশ্য ভোটে লড়তে রাজি হন।