কলকাতা: লক্ষ্মীবারে সব্যসাচী দত্তের (Sabyasachi Dutta) বিধানসভায় গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমদের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা তুলে নেওয়ার অব্যবহিত পরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিধানসভার ভেতর সব্যসাচীর তৃণমূলে যোগদানকে ‘বিরল এবং ব্যতিক্রমী’ ঘটনা বলে বর্ণনা করেছিলেন। আর শুক্রবার বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে সংবিধানের প্রতিলিপি হাতে বিধানসভাতেই ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানালেন বিরোধী নেতা। তাঁর হুঁশিয়ারি, এই নজিরবিহীন কাজে তাঁরা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করবেন। পুজোর ছুটি কাটলেই এ নিয়ে রাজ্যপালের কাছেও দরবার করবেন।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিজেপির সঙ্গে প্রায় দুই বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে তৃণমূলে ফিরেছেন বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা প্রাক্তন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তাঁর দলবদল নিয়ে স্বভাবতই তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী টেনেছেন অন্য প্রসঙ্গ। কীভাবে বিধানসভার মধ্যে কোনও নেতার হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে যোগদান করানো যায়, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
আর এদিন তাঁর দলের বিধায়কদের নিয়ে বিধানসভায় এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান শুভেন্দু। ‘কেন বিধানসভা কে পার্টি অফিসে পরিনত করা হল’, ‘জবাব চাই, জবাব দাও’ এমন স্লোগান ওঠে। এর পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, “সংবিধানের মূল অস্তিত্বকে নস্যাৎ করে, সমাধিস্থ করে দিয়ে ‘ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি, অফ দ্য পার্টির এটাই ছিল শেষ জায়গা।’ এর পর সংবিধানের প্রতিলিপি হাতে নিয়ে শুভেন্দু আরও বলেন, ‘আজ এর প্রতিবাদ রাখলাম। বিধানসভায় কাজের দিন শুরু হলে অধ্যক্ষের কাছে আমরা ডেপুটেশন দেব। কারণ, এই বিধানসভা ভবনের অভিভাবক তিনি। এবং সবিধানের কাস্টডিয়ান হচ্ছেন রাজ্যপাল। আমরা অধ্যক্ষ এবং রাজ্যপালের কাছে যাব।’ তাছাড়া জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করার হুঁশিয়ারি দেন বিধানসভার বিরোধী নেতা।
তিনি বলেন, “এর নিষ্পত্তি, আর শেষ দেখে ছাড়ব। আমাদের রাজনীতি নিয়ে বক্তব্য নেই। কে এল, কে গেল সে নিয়েও আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু আইনসভা এবং সংবিধান যাকে দায়িত্ব দিয়েছে, সেই পবিত্র স্থান, মন্দিরে পরিষদীয় মন্ত্রী তাঁর দলের পতাকা ধরিয়ে যে কাজটা করেছেন, এ কাজ শুধু অনৈতিক বা নিন্দনীয় নয়, এ কাজ নজিরবিহীন! এতে থেমে থাকলে হবে না। উৎসবের মরসুম শেষ হলে আরও বৃহত্তর ভাবে মাঠে নামা দরকার।”
আর এতে শুভেন্দু যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভোটে লড়ছে, তাদের সবাইকে এই প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান করেন। তাঁর সংযুক্তি, “তৃণমূলেও যদি কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন নেতা থাকেন, যিনি নিজেকে কর্মচারী মনে করেন না, রাজনৈতিক কর্মী মনে করেন, তাঁদেরও বলব এর প্রতিবাদ করার দরকার আছে।”
তিনি যোগ করেন, “অধ্যক্ষের পাণ্ডিত্য ও তাঁর চেয়ারকে মর্যাদা দিয়েই বলি এখানে পরিষদীয় মন্ত্রীর ইশারাতে সব হয়। তিনি তাঁর সরকারি চেয়ারে বসে এ কাজটা করেছেন। তাই বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আমরা অধ্যক্ষের কাছে যাব। তার পর এখান থেকে মার্চ করে রাজভবনে যাব।”
এদিকে বিধানসভার ভেতর এই দলবদল কিংবা নতুন দলে যোগদানে খারাপ কিছু দেখছেন না মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়রা। তাঁর কথায়, “বিধানসভায় যোগদান করলে কোনও মহাভারত অশুদ্ধ হয় না। তার চেয়ে অনেক খারাপ কথা বিধানসভায় হয়।”
আরও পড়ুন: Calcutta High Court: ‘সব ভুলে কাজে মন দিন’, অধ্যক্ষের সঙ্গে সিবিআই-ইডির দ্বন্দ্বে নির্দেশ হাইকোর্টের