কলকাতা: সপ্তাহের প্রথম দিনই বিজেপি বিধায়কদের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল বিধানসভা কক্ষ। বিধানসভার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা এবং সেটি আলোচনা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদেই অধিবেশন ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। অধিবেশন কক্ষের বাইরে এসে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলে কাগজ ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। ‘বিধানসভাকে টিএমসি-র পার্টি অফিস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে কটাক্ষ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে এদিনের ঘটনা মেনে নেওয়া হবে না, আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার ঘটনায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি অবাক হয়ে যাই স্পিকার বিরুদ্ধে অনাস্থা! স্পিকারকে দেখে শ্রদ্ধা হয় না!” তবে হাউজ তাঁকে অসম্মান করতে দেয়নি জানিয়ে স্পিকারের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যারা আপনাকে অসম্মান করল তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আমি ঈশ্বরের কাছে এটাই চাইব।”
এদিন অধিবেশন ওয়াকআউটের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিধানসভার অধ্যক্ষের নেতৃত্বে দেড় বছর ধরে পিএসি, স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন, বিরোধী বিধায়কদের সাসপেন্ড করা, রাজ্য পুলিশ বিধানসভার ভিতরে থাকবে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে পারবে না সহ শাসকদলের বিমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা এনেছিলাম। স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলাম। ফেব্রুয়ারিতে অনাস্থার নোটিশ দিয়েছিলাম আইন মেনে। তারপর বিজনেজ অ্যাডভাইসারি কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে আজ অনাস্থা ভোটের তারিখ ঠিক করে বুলেটিনের কপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে বিরোধীদের কোনও মতামত গ্রহণ করা হয়নি।”
এপ্রসঙ্গে কটাক্ষের সুরে বিরোধী দলনেতা বলেন, “আজ আমাদের প্রায় ৭০ বিধায়ক ছিলাম। অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থনের পক্ষে ৩০ জন বিধায়ক লাগবে, মতামত দেওয়ার জন্য। আমরা ৭০-এর বেশি ভোট পেতাম। তবে ওদের ২০০-র বেশি বিধানসভার সদস্য ছিল। তাই জেহাদ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু, এখানে হাউজে আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের মতামত গ্রহণ করলেন না স্পিকার।” দ্বিতীয় দফায় সভা শুরু হওয়ার পরই স্পিকার বলেন, “আমি বিজেপি থেকে অনাস্থা পেয়েছি। তৃণমূল থেকে একটা পাল্টা ভার্সন পেয়েছি। দুটোর বক্তব্য খতিয়ে দেখছে। খতিয়ে দেখে রুলিং দেব। আজ বর্তমান পরিস্থিতিতে হেল্ড আপ করলাম।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ফিরহাদ হাকিম সহ কয়েকজনকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে পুরোনো তারিখ দিয়ে বেআইনিভাবে আস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে বলে অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি বলেন, “এভাবে অধ্যক্ষের কোনও আস্থা জ্ঞাপনের সুযোগ নিয়মে নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিরোধী বা রাজ্যপাল বা বিচার বিভাগ প্রশ্ন তুললে কেবল মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সদস্যদের থেকে আস্থা চাইতে পারেন।” এদিন বেআইনিভাবে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে রীতিমতো হুঁশিয়ারির সুরে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিধানসভায় আইনের শাসন না থাকলে বিচার ব্যবস্থার শরণাপন্ন হতে হয়। আমরা আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”
গত ১২ বছর স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য সহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির বাজেট নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি এবং অধ্যক্ষকে নিয়েও কোনও আলোচনা হতে দেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। যদিও এ বিষয়ে পাল্টা খোঁচা দিয়ে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর আগেও স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সময় আপনি সরকার পক্ষে ছিলেন। তাই আপনার মনে নেই।”