কলকাতা : নরেন্দ্রপুরে এক পরিচারিকাকে অপহরণের চেষ্টা মামলায় আদালতকে বিপথে পরিচালনার অভিযোগ। এই নিয়ে ডিজিপি (DGP)-র কাছে রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। ৭ জুনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে ডিজিপি-কে। একইসঙ্গে ওই মামলা নরেন্দ্রপুর থানার কাছ থেকে নিয়ে সিআইডি (CID)-কে হস্তান্তর করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধেও উপযুক্ত বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, গত ১৯ এপ্রিল বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু যে রিপোর্ট পেশ করেছেন তাতে তিনি একাধিক খামতির কথা উল্লেখ করেছেন। যদিও নথি দেখে আদালত মনে করছে যে আরও অনেক খামতি এই মামলায় আছে, যেটা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উল্লেখ করেননি।
মধু সিং নামে নরেন্দ্রপুরে বাসিন্দা ওই পরিচারিকাকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল গত ৩ ফেব্রুয়ারি। নরেন্দ্রপুরেই শশাঙ্ক রাজ সাহু নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তিনি কাজ করেন। তাঁর অভিযোগ, গত ২৭ জানুয়ারি বিকাল চারটের সময় তিনি যখন কাজ সেরে ফিরছিলেন তখন ৩ ব্যক্তি তাঁর পথ আটকায়। তারা শশাঙ্কবাবুর সম্পর্কে তাঁর কাছে জানতে চায়। বাড়িতে কটি ঘর রয়েছে? কোন ঘরে কে থাকেন ? কে কখন বের হন ? এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে এবং ঘুষ দেওয়ার চেষ্টাও করে। শশাঙ্কবাবুর বাড়ি দখলের হুমকিও দেওয়া হয়।
ঘটনাটি নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এরপর গত ৩০ জানুয়ারি ফের ওই তিন ব্যক্তি মধু সিংয়ের পথ আটকায়। ফের থানায় অভিযোগ করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ-ছয় জন ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে এসে মধু সিংকে অপহরণের চেষ্টা করে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিনোদ যাদব নামে এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে এবং গাড়ি থেকে একাধিক সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয় বলে দাবি মামলাকারীর।
যদিও বাজেয়াপ্ত জিনিসের তালিকায় গাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখানো হয়নি বলে দাবি মধু সিংয়ের। পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের আবেদন করা হলেও তারা সেটি সংগ্রহ করেনি বলে অভিযোগ। এর মধ্যে ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং ২০ ফেব্রুয়ারি বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী বাড়ি ঢুকে তাঁকে খুনের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ মধুর। গোটা ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তা অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিজিপি-কে চিঠি দিয়ে নিরাপত্তার আবেদন জানান। একইসঙ্গে মামলা সিআইডি-কে হস্তান্তর করার আবেদন জানান।
আজ আদালতে রাজ্যের তরফে বলা হয়, ১৯ এপ্রিল অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের রিপোর্টকে অনুমোদন দেওয়ার পর পুলিশ সুপার ছুটিতে গিয়েছিলেন। রাজ্যের আইনজীবীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বলেন, বিষয়টি পুলিশ সুপারকে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালতের কাছে এটা স্পষ্ট নয় যে কেন সুপার নিজে এই রিপোর্টে স্বাক্ষর করেননি। আর যখন এসপি অফিসের তরফে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্বাক্ষর করেন, রিপোর্টে সেটা উল্লেখ করা উচিত ছিল।
মামলার তদন্ত নিয়েও অসন্তুোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, তদন্তকারী অফিসার অর্ণব চক্রবর্তী সবেমাত্র কনস্টেবল পদ থেকে এএসআই(ASI) হয়েছেন। এই মামলা উচ্চপদস্থ কোনও পুলিশ আধিকারিকের দেখা উচিত। তাই, মামলার সব নথি, নরেন্দ্রপুর থানার আইসি-র রিপোর্ট এবং ১৯ এপ্রিলের রিপোর্ট অবিলম্বে ডিজিপি মনোজ মালব্যকে পাঠাতে হবে। ডিজিপি চাইলে অতিরিক্ত চার্জশিট বা নতুন করে চার্জশিট পেশ করতে পারেন। এইপরই বিচারপতি নির্দেশ দেন, এই মামলা সিআইডি-কে হস্তান্তর করা হল।